করোনা রোগী শনাক্ত হলেই পুরো এলাকা 'লকডাউন'

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি দিন দিন অবনতি হতে শুরু করেছে। সরকার আশঙ্কা করছে, এ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। এ জন্য এখন থেকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত হলেই সেই এলাকা পুরোটা কঠোরভাবে ‘লকডাউন’ বা অবরুদ্ধ করা হবে। এত দিন সাধারণত মারা গেলেই সংশ্লিষ্ট এলাকা লকডাউন করা হচ্ছিল। এ ছাড়া এখন থেকে অতি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঢাকায় আসতেও পারবেন না এবং যেতেও পারবেন না।

গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় এসব আলোচনা হয়। সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনাসহ তা মোকাবিলায় মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের আরও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

এদিকে গতকাল থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ওষুধের দোকান ছাড়া সারা দেশের সব দোকানপাট সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ। তবে সাংবাদিক ও সংবাদপত্রবাহী যানবাহন চলাচল করতে পারবে। সংবাদপত্রসহ জরুরি সেবা এই ঘোষণার বাইরে থাকবে। এ ব্যাপারে স্থানীয় পুলিশকে আগেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে সদর দপ্তরের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশের মহাপরিদর্শক জাবেদ পাটোয়ারী প্রথম আলোকে বলেন, বারবার অনুরোধের পরও মানুষ ঘরে থাকছে না। তারা সামাজিক দূরত্ব না মেনে সর্বত্র ঘোরাফেরা করছে। অথচ করোনাভাইরাস প্রতিহত করতে হলে মানুষের ঘরে থাকার কোনো বিকল্প নেই।

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি সোহেল রানা জানিয়েছেন, সুপারশপ ও স্বীকৃত কাঁচাবাজারগুলো ভোর ছয়টা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত চালু রাখা যাবে। পাড়া-মহল্লার মুদিদোকানগুলো খোলা থাকবে ভোর ছয়টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত।

গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া সাতজন মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা হলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান। সবাই মাস্ক পরে দূরত্ব বজায় রেখে বসেছিলেন।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও সতর্কতার সঙ্গে এবং কঠোরভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিসভা। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতি আগের থেকে কিছুটা অবনতি হয়েছে, সুতরাং জনগণের পরিপূর্ণ সাহায্য ছাড়া এটি কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব নয়। 

দীর্ঘদিন কারাবন্দীরা ছাড়া পাচ্ছেন

মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থিত একজন মন্ত্রী জানিয়েছেন, ছোটখাটো অপরাধে যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আছেন এবং খুন, ধর্ষণ ও অ্যাসিড নিক্ষেপের অপরাধ বাদে অন্যান্য বড় অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে যাঁরা দীর্ঘদিন কারাবন্দী, তাঁদের কীভাবে ছেড়ে দেওয়া যায়, সে বিষয়টি দেখতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়ে একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। 

সরকারি একটি সূত্র জানিয়েছে, এ ধরনের প্রায় তিন হাজার আসামিকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয় নিয়ে সরকারের মধ্যে আলোচনা চলছে।

>মন্ত্রিসভার বৈঠক। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা। আরও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর।

পোশাক কারখানার পরিস্থিতিতে ক্ষোভ

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, তৈরি পোশাক কারখানা খোলার কথা বলে সারা দেশ থেকে যেভাবে শ্রমিকদের আনা হয়, তা নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জন্য বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, ক্ষমতাসীন দলের একজন সাংসদসহ (গার্মেন্টস ব্যবসায়ী) ও বিজিএমইএর ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। এ সময় বাণিজ্যমন্ত্রী আত্মপক্ষ সমর্থন করে বিজিএমইএ নেতৃত্বকে দায়ী করার চেষ্টা করেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মন্ত্রী জানান।

বৈঠকে চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী (পিপিই) ও মাস্ক উৎপাদনকারী কারখানা ছাড়া বাকিগুলো বন্ধ রাখার বিষয়ে আলোচনা হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি প্রথম আলোকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি পথ বের করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও মুখ্য সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব দিয়েছেন।

 রমজান মাসে অফিস সময়

মন্ত্রিসভার বৈঠকে আসন্ন রমজান মাসের জন্য সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে অফিসের সময়সূচি সকাল ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ঠিক করা হয়। বেলা সোয়া একটা থেকে দেড়টা পর্যন্ত ১৫ মিনিট জোহরের নামাজের বিরতি থাকবে।

ব্যাংক, বিমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ডাক, রেলওয়ে, হাসপাতাল ও রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠান, কলকারখানা এবং অন্যান্য জরুরি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান এই সময়সূচির আওতার বাইরে থাকবে। এসব প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব আইন অনুযায়ী জনস্বার্থ বিবেচনা করে সময়সূচি নির্ধারণ ও অনুসরণ করবে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২৪ বা ২৫ এপ্রিল থেকে রোজা শুরু হবে।

মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সচিবালয়ে নির্ধারিত গণমাধ্যমকে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। বৈঠকে একাধিক আইনের খসড়া অনুমোদন করা হয়।