হাসপাতালে ভর্তি না নেওয়ায় গাড়িতে সন্তান প্রসব

অটোরিকশায় জন্ম নেওয়া নবজাতক। সোমবার রাত ৮টা, গাইবান্ধা শহরের মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের সড়কে। ছবি: প্রথম আলো
অটোরিকশায় জন্ম নেওয়া নবজাতক। সোমবার রাত ৮টা, গাইবান্ধা শহরের মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের সড়কে। ছবি: প্রথম আলো

প্রসববেদনা নিয়ে মিষ্টি আকতার (২০) গিয়েছিলেন গাইবান্ধা মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রে। তিনি প্রসববেদনায় ছটফট করছিলেন। কিন্তু ভর্তি না নেওয়ায় তিনি সড়কের ওপরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় সন্তান প্রসব করেছেন। গতকাল সোমবার রাত আটটার দিকে গাইবান্ধা শহরের মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের সড়কে এই ঘটনা ঘটে।

মিষ্টি আকতার গাইবান্ধা সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের আবদুর রশিদের স্ত্রী। আবদুর রশিদ আজ মঙ্গলবার দুপুরে বলেন, ‘আজ সকালে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়ায় আমরা বাড়ি চলে এসেছি। মা ও নবজাতক দুজনেই সুস্থ আছেন।’

আবদুর রশিদ জানান, সোমবার সন্ধ্যায় বাড়িতে মিষ্টি আকতারের প্রসববেদনা ওঠে। তখন মিষ্টি আকতারকে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাযোগে গাইবান্ধা মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রে নিয়ে যান। এ সময় কেন্দ্রে দায়িত্বরত পরিবার কল্যাণ পরিদর্শক তৌহিদা বেগম কোনো পরীক্ষা না করেই তাঁকে অন্য কোনো হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। তারপরও তিনি এই প্রসূতিকে ভর্তি করে নিতে পরিদর্শককে একাধিকবার অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি কোনো কথা শোনেননি। পরে নিরুপায় হয়ে অন্যত্র সেবা পাওয়ার উদ্দেশে ওই অটোরিকশাযোগেই সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন। এ সময় মিষ্টি আকতার ব্যথায় চিৎকার করতে থাকেন। গাইবান্ধা মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র থেকে মাত্র ২০০ গজ দূরে শহরের মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের সড়কে তিনি ওই অটোরিকশার ভেতরেই একটি ফুটফুটে ছেলেসন্তান প্রসব করেন।

গাইবান্ধা পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শহিদ আহমেদ বলেন, প্রসূতির প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকলে উৎসুক জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র ঘেরাও করে। খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করি এবং এই প্রসূতিকে যথাযথ চিকিৎসা দিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাই। পরে বাধ্য হয়ে কর্তৃপক্ষ মিষ্টি আকতারকে মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রে ভর্তি করেন। তিনি আরও জানান, করোনা আতঙ্কে যদি কোনো কর্মচারী রোগীদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করে থাকেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

এ ব্যাপারে গাইবান্ধা যুব নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক জিয়াউল হক বলেন, গাইবান্ধা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ ধরনের ঘটনা মাঝেমধ্যেই ঘটিয়ে থাকেন। তাঁরা রোগী না দেখেই শহরের ক্লিনিকগুলোতে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

পরিবার কল্যাণ পরিদর্শক মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি কাগজপত্র দেখে রোগীর স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসব সম্ভব নয় বলে ফিরিয়ে দিই। কিন্তু রাস্তায় সন্তান প্রসব করবে, এমনটা ভাবিনি।’

গাইবান্ধা মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রের চিকিৎসক সেকেন্দার আলী জানান, বিষয়টি তদন্ত করে দায়িত্বরত পরিবার কল্যাণ পরিদর্শকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।