করোনা প্রতিরোধের সংগ্রামে একদল তরুণ

সড়কে চলাচল করা যানবাহনে জীবাণুনাশক ছিটাচ্ছেন (স্প্রে) এক নারী স্বেচ্ছাসেবী। সম্প্রতি পিরোজপুর শহরের হাসপাতাল সড়কে। ছবি: এ কে এম ফয়সাল
সড়কে চলাচল করা যানবাহনে জীবাণুনাশক ছিটাচ্ছেন (স্প্রে) এক নারী স্বেচ্ছাসেবী। সম্প্রতি পিরোজপুর শহরের হাসপাতাল সড়কে। ছবি: এ কে এম ফয়সাল

নাসিফ জাহাঙ্গীর (১৬) এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। ইচ্ছে ছিল পরীক্ষার পর কক্সবাজারের কোনো একটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার। করোনাভাইরাসের কারণে সে ইচ্ছা পূরণ হয়নি। তবে মানবতার সেবায় কাজ করার ইচ্ছাটা কাজে লাগিয়েছে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির পিরোজপুর ইউনিটের স্বেচ্ছাসেবক হয়ে শহর জীবাণুমুক্ত ও সচেতনতামূলক প্রচারণা করে। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলে শহরের সড়ক, হাসপাতাল, ক্লিনিক, কারাগার ও অফিস আদালত এলাকা জীবাণুনাশক করার কাজ। পাশাপাশি চলছে জনগণকে সচেতন করতে প্রচারণামূলক কাজ।

শুধু নাসিফ জাহাঙ্গীর নয়। পলাশ মিস্ত্রি, অলিউল্লাহ, জুবায়ের ইসলাম, সুমাইয়া আক্তার, জান্নাতুল মাওয়া ও প্রিতম মণ্ডল যুক্ত হয়েছে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবী কাজে। এ নিয়ে গত রোববার সকালে পিরোজপুর সদর হাসপাতালে কথা হয় নাসিফ জাহাঙ্গীরের সঙ্গে। সে বলল, গত ২৬ মার্চ বিকেলে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির পিরোজপুর ইউনিটের ইউনিট লেবেল অফিসার ইকবাল মাসুদ জানালেন, করোনাভাইরাস মোকাবিলার কাজে অংশ নেবে রেড ক্রিসেন্ট। তোমরা কাজ করতে আগ্রহী কি না? নাসিফসহ সাতজন স্বেচ্ছাসেবক মিলে সিদ্ধান্ত নিল কাজ করবে। এ সময় অনেককে বলা হলে তারা অনীহা দেখায়।

‘২৬ মার্চ রাতে কেনা হয় স্প্রে মেশিন ও জীবাণুনাশক দ্রব্য। এ সময় দোকান বন্ধ থাকায় ওই রাতে বাড়ি গিয়ে দোকানদারকে নিয়ে আসা হয়। ঢাকা থেকে পিপিই না আসায় রেইনকোট পড়ে কাজ শুরু করি।’ বলছিল নাসিফ জাহাঙ্গীর।

সরেজমিন দেখা যায়, একদল তরুণ-তরুণী কাঁধে স্প্রে মেশিন নিয়ে জীবাণুনাশক ছিটানোর কাজ করছেন। শহরের সড়কগুলো, হাসপাতাল, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে তাঁরা প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত জীবাণুনাশক ছিটাচ্ছে। হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো পরিষ্কার করছে। এ ছাড়া শহরে ঘুরে ঘুরে জনসচেতনতামূলক প্রচারণা চালাচ্ছে। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার কাজ করছে।

স্বেচ্ছাসেবক অলিউল্লাহ ও পলাশ মিস্ত্রি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকিমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কার্যক্রম চলবে। আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো হাসপাতাল, কারাগার ও সরকারি–বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জীবাণুমুক্ত করা এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা। বন্দীদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত ও সচেতনতা কষ্টসাধ্য বিষয়। তাই আমরা কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে কারাগারে কাজ শুরু করেছি। পাশাপাশি বন্দীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কারাগারে প্রচারপত্র বিতরণ করা হয়েছে। কারাগারের যেখানে বন্দীদের সমাগম বেশি হয়, সেখানে হাত ধোয়ার নিয়মাবলি, ভাইরাস ছড়ানোর বিষয়ে সতর্কতামূলক ব্যানার স্থাপন করা হয়েছে। দেশের সব দুর্যোগে আমরা কাজ করি। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের সময় মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া, রাতে খাবার বিতরণ, ঝড়ের পর উদ্ধার কাজ করা। গাছপালা কেটে সড়ক পরিষ্কারের কাজ করছি।’

রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির পিরোজপুর ইউনিটের জুনিয়র সহকারী পরিচালক ইকবাল মাসুদ বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন হাসপাতাল, সড়ক ও অফিসগুলোতে জীবাণুনাশক স্প্রে করি। আমাদের কয়েকজন তরুণ স্বেচ্ছাসেবক রোদের মধ্যে প্রচণ্ড তাপে এই কাজটি করছেন। তাঁরা ঝুঁকি নিয়ে হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত করার কাজ করে যাচ্ছেন।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের পিরোজপুর জেলা শাখার সভাপতি আইনজীবী মো. শহিদুল্লাহ খান বলেন, মানুষ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে যখন হাসপাতালে যেতে ভয় পাচ্ছে। জ্বর-সর্দি ও কাশির রোগীদের দেখলে এড়িয়ে চলছে। এমন সময়ে একদল তরুণ স্বেচ্ছাসেবী হাসপাতাল, ক্লিনিক পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করার কাজ করছে। তাঁদের এ কাজ প্রশংসার দাবি রাখে।