তাঁদের শাস্তি করোনা নিয়ে রচনা লেখা
জরুরি প্রয়োজন ছাড়া যাঁরা মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন, তাঁদের নিয়ে নাটোরের সিংড়া থানা–পুলিশ ‘করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এবং প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক রচনা লেখার ব্যতিক্রমী প্রতিযোগিতা শুরু করেছে। নিয়ম ভঙ্গকারীরা বিষয়টি শাস্তি হিসেবে নিলেও পুলিশ তাঁদের মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার উপহার দিয়ে পুরস্কৃত করছে।
সিংড়া থানা সূত্রে জানা যায়, শত অনুরোধ সত্ত্বেও কিছু চালক জরুরি প্রয়োজন ছাড়াই মোটরসাইকেল নিয়ে সিংড়া শহরে ও চলনবিলের রাস্তায় ঘোরাঘুরি করছেন। এতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে এবং সরকারের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কর্মসূচি বিঘ্নিত হচ্ছে। সড়ক পরিবহন আইন প্রয়োগ করেও চালকদের, বিশেষ করে তরুণ চালকদের মোটরসাইকেল চালানো বন্ধ করা যাচ্ছে না। তাই তাঁরা আদৌ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সম্পর্কে কতটুকু জানেন এবং এ ব্যাপারে তাঁদের কী করণীয়, তা নিরূপণ করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। এ জন্য সিংড়া সার্কেলের এএসপি জামিল আক্তারের পরামর্শে গতকাল সোমবার থেকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া যাঁরা মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন, তাঁদের দিয়ে ‘করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এবং প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক রচনা লেখানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য তাঁদের কাগজ–কলম দেওয়া হচ্ছে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাঁরা রচনা লিখছেন। পরে তাঁদের লেখাগুলো তাঁদের দিয়ে পড়ানো হচ্ছে। এতে তাঁরা নিজেরা উপলব্ধি করছেন তাঁরা কতটুকু করোনা সংক্রমণ বিষয়ে জানেন। এ ছাড়া রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে পরীক্ষা দেওয়ার মতো একটা বিষয়কে তাঁরা শাস্তি হিসেবেও মনে করছেন। ফলে ভবিষ্যতে আর মোটরসাইকেল নিয়ে বের না হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
আজ মঙ্গলবার বেলা ৩টার দিকে সিংড়া চলনবিল গেট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ছয়জন তরুণ মোটরসাইলের পাশে দাঁড়িয়ে রচনা লিখছেন। যাঁরা লিখতে পারছেন না, তাঁরা বলে শোনাচ্ছেন। পরে তাঁরা ক্ষমা চেয়ে ভবিষ্যতে আর জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হবেন না বলে অঙ্গীকার করলেন।
প্রতিযোগিতার সান্ত্বনা পুরস্কার হিসেবে পুলিশ তাঁদের সার্জিক্যাল মাস্ক ও স্যানিটাইজার উপহার দেয়। মাসুদ রানা নামের এমন একজন প্রতিযোগী জানালেন, পরীক্ষা দেওয়াটা খুবই কষ্টের। তাই তিনি আর বাইরে বের হবেন না, অন্যদেরও বাইরে আসতে নিষেধ করবেন।
পুলিশের সিংড়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার জামিল আক্তার জানান, ‘মোটরসাইকেলচালকদের অধিকাংশই বয়সে তরুণ। তাঁরা বিনা প্রয়োজনে বাইরে ঘোরাঘুরি করছেন। তাঁদের অর্থদণ্ড বা শারীরিক শাস্তি দিয়ে কষ্ট দিতে চাচ্ছি না। তাই এই ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে। গতকাল যাঁরা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন, তাঁরা আজ বাইরে বের হননি।