করোনার দিনে যুবকদের অন্য রকম উদ্যোগ

যশোরের কেশবপুরের বাগদাহ গ্রামের তিনটি প্রবেশপথে সাবান ও পানি রাখা হয়েছে। গ্রামে ঢুকতে হলে হাত ধুয়ে ঢুকতে হয়। গ্রামের যুবকদের উদ্যোগ এটি। ছবি: দিলীপ মোদক
যশোরের কেশবপুরের বাগদাহ গ্রামের তিনটি প্রবেশপথে সাবান ও পানি রাখা হয়েছে। গ্রামে ঢুকতে হলে হাত ধুয়ে ঢুকতে হয়। গ্রামের যুবকদের উদ্যোগ এটি। ছবি: দিলীপ মোদক

যশোরের কেশবপুর উপজেলার বাগদাহ গ্রামে করেনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে উদ্যোগী হয়েছেন যুবকেরা। গ্রামের প্রবেশপথে বাইরের লোকদের আসতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। যাদের ঢুকতেই হচ্ছে, তাদের জন্য হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাস্তায় ছিটানো হচ্ছে জীবাণুনাশক।

উপজেলার বাগদাহ গ্রামটি ঘনবসতিপূর্ণ। এ গ্রামের দুজন বিদেশ থেকে ফেরার পর তাঁদের বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গ্রামের মানুষের আতঙ্ক দূর করে তাদের সচেতন করে তুলতে গ্রামের যুবকেরা উদ্যোগী হন। মানুষের ভয়ভীতি দূর করতে সচেতন করতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে করণীয় সম্পর্কে জানান। পরে গ্রামের লোকদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটির আহ্বায়ক করা হয় অবসরপ্রাপ্ত সামরিক সদস্য নুরুল ইসলামকে আর সমন্বয়ক মফিজুর রহমান। ১১ সদস্যের কমিটিতে আছেন মসজিদের ইমাম, গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তি, মেডিকেল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া গ্রামের ছেলেরা।

কমিটির উদ্যোগে গ্রামের সব রাস্তায় জীবাণুনাশক ছড়ানো হয়। বিতরণ করা হয় মাস্ক। গ্রামের তিনটি প্রবেশপথে রাখা হয়েছে সাবান ও পানি। জরুরি প্রয়োজনে বাইরে গেলে বা কেউ এলে অবশ্যই তাঁকে হাত ধুয়ে ঢুকতে হয়। প্রতিটি প্রবেশপথেই কমিটির সদস্যরা পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করছেন। একটি তহবিল গঠন করা হচ্ছে, যা দিয়ে গ্রামের গরিব–অসহায় মানুষদের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে।

গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আবদুল গফফার (৭৫) বলেন, ‘গ্রামের যুবকদের উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি। আমরা তাদের উৎসাহিত করছি।’ বায়তুস সালাম জামে মসজিদের ইমাম মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘গ্রামকে করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা করতে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা ভালো। করোনাভাইরাসের প্রভাব সম্পর্কে মসজিদে বলেছি। বাড়িতে বসে নামাজ আদায় করতে বলেছি।’

গৃহবধূ পারুল বেগম গ্রামের প্রবেশপথে হাত ধুতে ধুতে বলছিলেন, তিনি কেশবপুর গিয়েছিলেন জরুরি ওষুধ আনতে। ফেরার পর হাত ধুয়ে বাড়ি যাবেন। নিরাপদ মনে হচ্ছে এখন।

বরিশালের শের–ই–বাংলা মেডিকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ইব্রাহীম হোসেন বলেন, ‘গ্রামের মানুষকে করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতন করা জরুরি। ছুটির এই সময়ে এমন উদ্যোগে অংশ নিলাম।’

কমিটির সদস্যসচিব মফিজুর রহমান বলেন, ‘এখন ব্যবসা–বাণিজ্য বন্ধ। তাই করোনাভাইরাস মোকাবিলায় গ্রামের নানা উদ্যোগে যুক্ত আছি। এতে গ্রামের সাধারণ মানুষের উপকার হচ্ছে।’ কমিটির আহ্বায়ক নুরুল ইসলাম বলেন, এখন তহবিল গঠন করে গ্রামের গরিব মানুষদের খাদ্য সহায়তা করা হবে।

কেশবপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত জাহান বলেন, ‘উদ্যোগটি খুবই ভালো। এই দুর্যোগকালে সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে। আমরাও তাদের সহযোগিতা করতে চাই। এ উদ্যোগ অনুকরণীয় হতে পারে।’