করোনার ভয়ে কেনাকাটার ধুম

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে, অথচ বাজারগুলোতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছে না। হাতিরপুল বাজার, ঢাকা, ৮ এপ্রিল, ২০২০। ছবি: প্রথম আলো
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে, অথচ বাজারগুলোতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছে না। হাতিরপুল বাজার, ঢাকা, ৮ এপ্রিল, ২০২০। ছবি: প্রথম আলো

রাজধানীর ৫২ এলাকা লকডাউনের খবর এসেছে এখন পর্যন্ত। এর মধ্যে মোহাম্মদপুর ও আদাবরের ৬টি এলাকা রয়েছে। মোহাম্মদপুরে কৃষি মার্কেটের সামনের এলাকাও এর আওতায়। তবে কৃষি মার্কেটে বেশ ভিড়। রিকশা, মানুষ, ব্যক্তিগত যানে ভরপুর। এ মার্কেট ছাড়াও টাউন হল বাজার, নিউমার্কেট কাঁচাবাজার, হাতিরপুল বাজার, কাঁঠালবাগান বাজার, কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে একই চিত্র। সামাজিক দূরত্ব এসব বাজারে খাটছে না।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের চতুর্থ স্তরে বাংলাদেশ। ২৬ মার্চ থেকে দেশে সাধারণ ছুটি চলছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে ও ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে মানুষকে ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। নিত্যপণ্য, ওষুধের দোকান ও জরুরি সেবা বাদে সব বন্ধ। ৬ এপ্রিল বলা হয়েছে, ওষুধের দোকান বাদে সব ধরনের দোকানপাট সন্ধ্যা ৭টায় বন্ধ হয়ে যাবে। সুপারশপ ও স্বীকৃত কাঁচাবাজারগুলো ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা এবং পাড়া-মহল্লার মুদিদোকান বন্ধ হবে বেলা ২টায়। প্রতিদিনই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এপ্রিল মাস নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সরকারপ্রধানসহ বিশেষজ্ঞরাও।

কাঁচাবাজারে আজ বুধবার তুলনামূলক ভিড় বেশি। মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে ঢুকতে ঠেলাঠেলি অবস্থা। সবজি, মাছ-মাংস বা শুকনো পণ্যের দোকানগুলো জমজমাট। রাজধানীর অন্যতম করোনাভাইরাস-সংক্রমিত এলাকা এটি। এখানে কেনাকাটা করতে আসা সোলায়মান আমিন বলেন, ‘কালকে শবে বরাত, আর সামনে কী হয় না-হয় বুঝতে পারছি না। এই মাসে যাতে আর বের হতে না হয়, তাই আজকেই কিনে রাখছি।’ বাজারে ভিড় এবং সামাজিক দূরত্ব নিয়ে প্রশ্ন করলে বলেন, ‘খেতে তো হবে।’

ঢাকার মোহাম্মদপুরের কিছু এলাকা লকডাউন। এ এলাকার কৃষি মার্কেটে মানুষের জমজমাট কেনাকাটা। ছবি: প্রথম আলো
ঢাকার মোহাম্মদপুরের কিছু এলাকা লকডাউন। এ এলাকার কৃষি মার্কেটে মানুষের জমজমাট কেনাকাটা। ছবি: প্রথম আলো


কৃষি মার্কেটে একটি কথা রটেছে, শনিবার সব বন্ধ হয়ে যাবে, কিছুই খোলা থাকবে না। একটি জুসের দোকানি মো. শরীফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘শনিবার সব বন্ধ করে দেবে শুনলাম। তাই মানুষ বেশি আজকে।’ কয়েকজন সবজি বিক্রেতাও একই কথা বললেন। এ ছাড়া ফাহিমা আক্তার নামের এক ক্রেতা জানান, তিনিও শুনেছেন শনিবার সব বন্ধ হয়ে যাবে। তাই প্রয়োজনীয় পণ্য কিনে রাখছেন।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল হামিদ মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, শনিবার সব বন্ধ হয়ে যাবে, এমন কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তিনি জানান, ৬ এপ্রিল দোকানপাট খোলার যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সেটাই বলবৎ আছে।

রাজধানীর অন্যতম বড় পাইকারি বাজার কারওয়ান বাজারে ভিড় আছেই। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে যেন মাথাব্যথা নেই কারও। ছবি: প্রথম আলো
রাজধানীর অন্যতম বড় পাইকারি বাজার কারওয়ান বাজারে ভিড় আছেই। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে যেন মাথাব্যথা নেই কারও। ছবি: প্রথম আলো


মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারে ঢোকার পথে বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড দেওয়া। এতে ভেতরে ঢোকার মুখে গাড়ি, রিকশার জন্য সড়কে যানজট লেগে গেছে। এ বাজারেও প্রচুর মানুষ কেনাকাটা করছে।
রাজধানীর নিউমার্কেট কাঁচাবাজারের ভেতরও অনেক মানুষ। বাজারে আসা সবাই নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা ও বাইরে বের না হওয়ার বিষয়ে জানেন। তবু বের হওয়া প্রসঙ্গে ক্রেতা সালাম তালুকদার বলেন, ‘সামনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে বলে মনে হচ্ছে। তখন আসলে বাজার পরিস্থিতি কী হবে, জানি না। আমরাও চাই না বের হতে। এখন প্রয়োজনীয় যা কিছু তা কিনে রাখছি, যাতে পরে আর বের হতে না হয়।’
রাজধানীর অন্যতম বড় পাইকারি বাজার কারওয়ান বাজার। সারা দেশের যান চলাচল ও মানুষের চলাফেরায় নিয়ন্ত্রণ করায় সব জায়গা ফাঁকা। কিন্তু কারওয়ান বাজারের চিত্র ভিন্ন। এখান থেকে যেমনি ঢাকার অন্যান্য জায়গায় পণ্য সরবরাহ হয়, তেমনি অনেকে বাজার করতেও আসেন। তাই ভিড় এখানে লেগেই থাকে। আগামীকাল শবে বরাত এবং সামনে চলাফেরা আরও নিয়ন্ত্রিত হতে পারে, সেই আশঙ্কায় মানুষের ভিড় আজ বেশি দেখা গেছে কারওয়ান বাজারে।

নিউমার্কেট কাঁচাবাজারেও মানুষের ভিড়। ছবি: প্রথম আলো
নিউমার্কেট কাঁচাবাজারেও মানুষের ভিড়। ছবি: প্রথম আলো

মগবাজারের বাসিন্দা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ভয় কাজ করে, কিন্তু খাওয়া দাওয়াও বন্ধ করা যাবে না।’
হাতিরপুল, কাঁঠালবাগান ও পান্থপথের বাজারেও মানুষ কেনাকাটা করছে। নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখার যে নির্দেশনা বা সতর্কতা, কোনোটাই মানা হচ্ছে না এসব বাজারে।