ঢাকার ৯ হাসপাতালের বহির্বিভাগে সেবা পাচ্ছেন করোনা রোগীরা

শুধু করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগীদের চিকিৎসার জন্য রাজধানীতে সরকার–নির্ধারিত হাসপাতালগুলোর বহির্বিভাগ প্রস্তুত। এসব হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের পদায়ন করা হয়েছে। তাঁদের জন্য ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রীও (পিপিই) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

রাজধানীতে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগীদের চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে নয়টি হাসপাতালের নাম বলা হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি সরকারি হাসপাতাল। এখন পর্যন্ত শুধু কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে করোনা সংক্রমিত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বাকি পাঁচটি সরকারি হাসপাতাল হচ্ছে মহাখালীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, মতিঝিলের রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতাল, বাবুবাজার এলাকার মহানগর জেনারেল হাসপাতাল, মিরপুরের মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল। আর বেসরকারি তিন হাসপাতাল হচ্ছে উত্তরা ও মিরপুরের রিজেন্ট হাসপাতাল এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল এলাকার কাছে অবস্থিত সাজিদা ফাউন্ডেশন। 

সরকার–নির্ধারিত চারটি সরকারি (কুর্মিটোলা ব্যতীত) এবং দুটি বেসরকারি হাসপাতাল (উত্তরার রিজেন্ট ব্যতীত) গত মঙ্গলবার সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন প্রথম আলোর দুই প্রতিবেদক। এই ছয়টি হাসপাতালেই করোনার উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের জন্য বহির্বিভাগ খোলা হয়েছে।

রোগীদের জন্য নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) এবং কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস দেওয়ার সুবিধা বা ভেন্টিলেশন জরুরি। এই ছয় হাসপাতালের তিনটিতে আইসিইউ সুবিধা নেই। শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে ১৬টি আইসিইউ চালুর প্রস্তুতি চলছে। সাজিদায় আইসিইউর ৪টি শয্যা থাকলেও তা এখনো চালু হয়নি। যদিও এখানে ছয়জন রোগী আইসোলেশনে (বিচ্ছিন্নকরণ) আছেন। ৫০ শয্যার মিরপুরের রিজেন্ট হাসপাতালে চারটি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। হাসপাতালের পরিচালক সায়েদুর রহমান জানান, সার্বক্ষণিক বহির্বিভাগ চালু আছে। করোনায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি করার বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

>করোনাভাইরাসের উপসর্গ জ্বর, সর্দি, শ্বাসকষ্ট নিয়ে আসা রোগীরা বহির্বিভাগে সেবা নিতে পারছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, এই ছয় হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসার জন্য শয্যা রয়েছে ৫৮০টি। বাকি তিনটি হাসপাতালের মধ্যে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে শয্যা রয়েছে ৫০০টি, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ২০০টি এবং উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা ৫০। সব মিলিয়ে করোনা সংক্রমিত রোগীর জন্য রাজধানীতে নির্ধারিত নয়টি হাসপাতালে শয্যা রয়েছে ১ হাজার ৩৩০টি। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল শাখা) আমিনুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ও জনবল দেওয়া হয়েছে। শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালের আইসিইউর প্রয়োজনীয় সামগ্রী দু-এক দিনের মধ্যে পৌঁছে যাবে। অন্য হাসপাতালগুলো রোগীদের সেবা দেওয়ার প্রস্তুতি আছে। 

মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য হাসপাতালে
মিরপুরের মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য হাসপাতালে ২০ জন চিকিৎসক ও ৩০ জন নার্সকে পদায়ন করা হয়েছে। হাসপাতালের পরিচালক শামছুল করিম বলেন, এখানে বহির্বিভাগ চালু করা হয়েছে। এখানে আইসিইউ নেই। এ হাসপাতাল আইসোলেশন সেন্টার হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। বর্তমান জনবল দিয়ে তিন পালায় হাসপাতাল চালানো যাবে না। 

শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল
মহাখালীতে অবস্থিত শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের আইসিইউতে আটটি শয্যা রয়েছে। আট শয্যার একটি হাইডিপেন্ডেন্সি ইউনিটকেও (এইচডিইউ) আইসিইউ করা হবে।

হাসপাতালের পরিচালক ফারুক আহমেদ বলেন, আইসিইউ পরিচালনার জন্য অত্যাবশ্যকীয় তিনটি যন্ত্র এখনো পাওয়া যায়নি। আইসিইউতে দায়িত্ব পালনের মতো প্রশিক্ষিত লোকবল দেওয়া হয়নি। 

রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতাল
করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য এখনো প্রস্তুতি শেষ করতে পারেনি রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতাল। এখানে আইসিইউ ও ভেন্টিলেটর নেই। 

হাসপাতালটির তত্ত্বাবধায়ক সৈয়দ ফিরোজ আলমগীর বলেন, বহির্বিভাগে চিকিৎসা দেওয়ার সক্ষমতা তাঁদের আছে। অন্তর্বিভাগে সেবা দেওয়ার জন্য অক্সিজেন ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ দরকার। 

মহানগর জেনারেল হাসপাতাল
পুরান ঢাকার মহানগর জেনারেল হাসপাতালে পরিচালকসহ চিকিৎসক আগে ছিলেন ১৮ জন। নতুন দেওয়া হয়েছে আরও ১৫ জন। নার্স আছেন ৩৮ জন। ১০০ শয্যার মধ্যে ৬০টি করোনার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। হাসপাতালের পরিচালক প্রকাশ চন্দ্র রায় প্রথম আলোকে বলেন, জ্বর, সর্দি, শ্বাসকষ্ট নিয়ে আসা রোগীদের বহির্বিভাগে সেবা দেওয়া হচ্ছে। রোগী ভর্তির জন্যও প্রস্তুতি আছে।