গণহত্যা সনদ মেনে চলার নির্দেশ জারি করল মিয়ানমার সরকার

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

গণহত্যা সনদ মেনে চলা এবং রাখাইন রাজ্যে সংঘটিত সব সহিংসতার সাক্ষ্যপ্রমাণ সংরক্ষণের জন্য মিয়ানমার সরকার আকস্মিকভাবে নির্দেশনা জারি করেছে। ৮ এপ্রিল মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকে দুটি আলাদা আদেশে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়। ধারণা করা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) নির্দেশ পালনের অংশ হিসেবেই মিয়ানমার এই পদক্ষেপ নিয়েছে।

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সুরক্ষায় গণহত্যা সনদ লঙ্ঘন থেকে নিবৃত্ত রাখা ও গণহত্যার অপরাধের সব সাক্ষ্যপ্রমাণ সংরক্ষণের জন্য মিয়ানমারের প্রতি আইসিজে গত ২৩ জানুয়ারি এক আদেশ জারি করেন। আইসিজের ওই আদেশ প্রতিপালনে দেশটি কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তার একটি প্রতিবেদন আগামী ২২ মের মধ্যে আদালতে জমা দেওয়ার কথা। আদালতে প্রতিবেদন পেশ করার সময়সীমার ঠিক এক মাস আগে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট এই নির্দেশ দুটি জারি করলেন।

দেশটির সব মন্ত্রী, রাজ্য সরকার ও স্থানীয় সরকার প্রশাসন, সামরিক এবং বেসামরিক নিরাপত্তা বাহিনীর সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রতি জারি করা এই আদেশে গণহত্যা সনদের বিধি ২ ও ৩–এর কোনো লঙ্ঘন যাতে না ঘটে, তা মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আইসিজে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে সর্বসম্মতভাবে মিয়ানমারের প্রতি যে চার দফা অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন, সেগুলো মেনে চলা মিয়ানমারের জন্য বাধ্যতামূলক।

গাম্বিয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে গণহত্যার ঝুঁকি থেকে রক্ষায় অন্তর্বর্তী একটি আদেশ দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের শরণাপন্ন হলে গত ডিসেম্বরে সেই আবেদনের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আদালত অন্তর্বর্তী আদেশ জারির পর গণহত্যার অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কি না, সে বিষয়েও শুনানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং গাম্বিয়াকে তার পূর্ণাঙ্গ আরজি পেশ করার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন।

আইসিজের অন্তর্বর্তী নির্দেশনার মধ্যে ছিল—১. গণহত্যা সনদের বিধি ২ অনুযায়ী মিয়ানমারকে তার সীমানার মধ্যে রোহিঙ্গাদের হত্যা, জখম বা মানসিকভাবে আঘাত করা, পুরো জনগোষ্ঠী বা তার অংশবিশেষকে নিশ্চিহ্ন করা এবং তাদের জন্মদান বন্ধের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ থেকে অবশ্যই নিবৃত্ত থাকা। ২. সেনাবাহিনী বা অন্য কোনো অনিয়মিত সশস্ত্র ইউনিট বা তাদের সমর্থনে অন্য কেউ যাতে গণহত্যা সংঘটন, গণহত্যার ষড়যন্ত্র, প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে গণহত্যার জন্য উসকানি দেওয়া, গণহত্যার চেষ্টা করা বা গণহত্যার সহযোগী হতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করা। ৩. গণহত্যা সনদের বিধি ২–এর আলোকে গণহত্যার অভিযোগের সঙ্গে সম্পর্কিত সব সাক্ষ্যপ্রমাণ রক্ষা এবং তার ধ্বংস সাধনের চেষ্টা প্রতিরোধ করা। এবং ৪. এই আদেশ জারির দিন থেকে চার মাসের মধ্যে মিয়ানমার আদালতের আদেশ অনুযায়ী যেসব ব্যবস্থা নিয়েছে, সেগুলো আদালতকে জানানো এবং আদালতের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত প্রতি ছয় মাস পরপর এ বিষয়ে প্রতিবেদন পেশ করা।

মিয়ানমার আইসিজের শুনানিতে গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে এবং অন্তর্বর্তী আদেশ জারির মতো কোনো পরিস্থিতি নেই বলে দাবি করে। তবে এখন আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্যোগ নিল। গণহত্যা সনদের লঙ্ঘন ঘটার মতো কোনো অপরাধের চেষ্টা বা ষড়যন্ত্র সম্পর্কেও প্রেসিডেন্টের দপ্তরকে জানানোর জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা ১/২০২০ ও নির্দেশনা ২/২০২০ স্মারকে জারি করা এ দুটি আদেশ স্বাক্ষর করেছেন প্রেসিডেন্টের দপ্তরের স্থায়ী সচিব খিন লাট।