আবার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের শঙ্কা, সীমান্তে সতর্কতা

কক্সবাজার
কক্সবাজার

মিয়ানমার থেকে আবারও বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের শঙ্কা শুরু হয়েছে। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্তে কয়েক শ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিদের। রোহিঙ্গাদের সম্ভাব্য অনুপ্রবেশ নিয়ে সতর্ক অবস্থানে আছে বিজিবি। বৃহস্পতিবার রাতে সীমান্তের বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে।

উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য সুলতান আহমদ বলেন, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে সীমান্তে দায়িত্বে থাকা একটি সরকারি সংস্থার পক্ষে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। জানানো হয়, বেশ কিছু রোহিঙ্গা মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ চেষ্টা চালাতে পারে। খবর পেয়ে তিনিসহ কয়েকজন রাত ১১টার দিকে সীমান্তের পাইশাখালী এলাকায় অবস্থান নেন। তখন সীমান্তের ওপারে প্যারাবনের ভেতরে মানুষজনের গুঞ্জন শোনা যায়। এতে কিছুটা হলেও সম্ভাব্য রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এলাকাবাসী জানতে পেরেছেন, একটি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী দল এসব রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে নিয়ে আসার চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে খবর পাওয়ার পর এলাকায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে সবাই। রাতেই এলাকার কয়েকটি স্থান থেকে মাইকিং করে স্থানীয় লোকজনকে সতর্ক করা হয়েছে। সম্ভাব্য অনুপ্রবেশের জন্য জড়ো করা রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলেও খবর বেরিয়েছে। বলা হচ্ছে, রাখাইন রাজ্যে চিকিৎসার তেমন ব্যবস্থা নেই। চিকিৎসার জন্য রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসার চেষ্টা করছে। মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি) রোহিঙ্গাদের কোনো ধরনের বাঁধাও দিচ্ছে না। এতে বাংলাদেশ সীমান্তের লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

পালংখালী ইউপির চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, আঞ্জুমানপাড়ার মেধীর খাল নামক সীমান্ত দিয়ে কয়েক শ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা বিষয়টি তিনি জানতে পেরেছেন। এ বিষয়ে সীমান্তে দায়িত্বে থাকা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) লোকজনের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। তাঁরা সতর্ক অবস্থানে আছেন। অবৈধভাবে কোনো রোহিঙ্গাকে অনুপ্রবেশ করতে দেওয়া হবে। অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে অনেকে করোনায় আক্রান্ত থাকতে পারে জানিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, এদের চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন।

২০১৭ সালে ২৫ আগস্টের পর দলে দলে রোহিঙ্গারা উখিয়া ও টেকনাফের সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেন। এরপর থেকে উখিয়া ও টেকনাফে বিভিন্ন স্থানে সাড়ে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাস করছেন। অবৈধভাবে আসা এসব রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার বিভিন্ন সময়ে ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বললেও বাস্তবে আজ পর্যন্ত প্রত্যাবাসন শুরু হয়নি।

কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লে কর্নেল আলী হায়দার আজাদ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, আঞ্জুমানপাড়া ও উলুবনিয়া সীমান্তে বিজিবি সদস্যদের পাঠানো হয়েছে। নতুন করে কাউকে অনুপ্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। আনজুমানপাড়া এবং উলুবনিয়া এলাকা বিজিবির কড়া নজরদারি রেখেছে। ঘটনাস্থলগুলোতে কোনো রোহিঙ্গা বা অন্য কোনো মানুষজন দেখা যায়নি।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও মোহাম্মদ নিকারুজ্জামান চৌধুরী ও টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, রাতে হঠাৎ করে দুই উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টার খবর পাওয়া যায়। তবে সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। তাঁরা আশা করছেন, কেউ অবৈধভাবে বাংলাদেশে ঢুকতে পারবে না।

গত ৮ মার্চ থেকে কক্সবাজারকে অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউন করা হয়। সড়ক, নৌ ও আকাশপথ বন্ধ রাখা হয়েছে। লকডাউনের আওতায় কক্সবাজারের এক উপজেলার লোকজন অন্য উপজেলায় যাতায়াত করতে পারছেন না। জেলার মানুষও অন্য কোনো জেলায় যেতে পারছেন না। অন্য কোনো জেলার মানুষও কক্সবাজারে ঢুকতে পারছে না। একইভাবে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা শিবিরকেও লকডাউনের আওতায় আনা হয়। একটি শিবিরের রোহিঙ্গারা ইচ্ছা করলে অন্য শিবিরে যাতায়াত করতে পারছে না। সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিষয়টির নজরদারি করছে।

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশঙ্কা প্রসঙ্গে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিছু রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে বলে খবর পেয়েছি। এ ব্যাপারে বিজিবি ও কোস্টগার্ডকে সীমান্তে সতর্ক রাখা হয়েছে। নতুন করে কোনো রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সুযোগ দেওয়া হবে না।’