কাঁচপুরে শ্রমিকদের অবাধ আড্ডা, করোনা ছড়ানোর শঙ্কা

শ্রমিক কলোনিতে গাদাগাদি করে বসবাস। কাঁচপুর শিল্পাঞ্চল, সোনারগাঁ, নারায়ণগঞ্জ। ছবি: প্রথম আলো
শ্রমিক কলোনিতে গাদাগাদি করে বসবাস। কাঁচপুর শিল্পাঞ্চল, সোনারগাঁ, নারায়ণগঞ্জ। ছবি: প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুর শিল্পাঞ্চলে চার কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে ১৭২টি শিল্পকারখানা। এখানকার বিভিন্ন শ্রমিক কলোনিতে গাদাগাদি করে বাস ৬০ হাজারের বেশি শ্রমিকের। এসব শ্রমিক আবার অবাধে এলাকায় চলাফেরা করছেন ও দলে দলে আড্ডা দিচ্ছেন। ফলে এলাকায় করোনাভাইরাসের বিস্তার ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।

এলাকাবাসী, পুলিশ ও শ্রমিক সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, কাঁচপুর বিসিক শিল্পনগরীতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ১৪২টি কারখানা রয়েছে। রয়েছে বড় বড় কয়েকটি শিল্পগোষ্ঠীর কারখানাও। এসব শিল্পকারখানায় ৬০ হাজারের বেশি শ্রমিক নিয়মিত কাজ করেন। শিল্পাঞ্চলের চার কিলোমিটারে মধ্যে রয়েছে অনেকগুলো শ্রমিক কলোনি। আশপাশের অনেক বাসাবাড়িতেও শ্রমিকেরা ভাড়ায় থাকেন। করোনাভাইরাস নিয়ে উদ্বেগের কারণে এখন কারখানাগুলো বন্ধ রয়েছে। ছুটি পেয়ে অনেক শ্রমিক নিজ নিজ এলাকায় চলে গেছেন। তবে প্রায় অর্ধেক শ্রমিক এখানে রয়ে গেছেন। তাঁদের ঘরের বাইরে বের না হওয়ার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিকার মাইকিং করা হয়েছে। তবে অনেকেই এই নির্দেশনা মানছেন না। বেশির ভাগ শ্রমিক প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় স্থানীয় বাজার ও আশপাশের সড়কে ভিড় জমাচ্ছেন। ফলে স্থানীয় কাঁচপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় করোনাভাইরাস নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।

কাঁচপুরের সবচেয়ে বড় শ্রমিক কলোনির নাম ‘খান কলোনি’। সরেজমিনে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, টিনশেডের একটি ছোট কক্ষে ৭ জন শ্রমিক বসে লুডু খেলছেন। এ কলোনির বাসিন্দা বাবুল মিয়া স্থানীয় একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিক। তিনি জানান, কলোনিতে ৩০৬টি কক্ষ রয়েছে। প্রতিটি কক্ষে ৭-৮ জন বসবাস করেন। কারখানা ছুটি হওয়ার পর ৩০ ভাগের মতো শ্রমিক গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন। বাকিরা এখানে বসবাস করছেন।

কলোনির ভেতরে ঘরের চারদিকে রয়েছে নালা। তাতে মশা-মাছির আড্ডা। ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে এখানে বসবাস করাই দায়। শ্রমিকেরা বলছেন, ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করার জন্য মালিকপক্ষকে কয়েকবার অনুরোধ করা হয়েছে। তারপরও তারা পরিষ্কার করছে না। ওই এলাকার অন্তত পাঁচটি কলোনিতে সরেজমিন গিয়ে একই চিত্র দেখতে পাওয়া যায়।

স্থানীয় কাঁচপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন বলেন, প্রতিদিন মাইকিং করে সবাইকে ঘরে থাকতে অনুরোধ করা হচ্ছে। তবু শ্রমিক ও স্থানীয় মানুষজনকে বাইরে বের হওয়া থেকে বিরত রাখা যাচ্ছে না। সকাল ও সন্ধ্যায় শত শত মানুষ বাজার ও আশপাশের সড়কে আড্ডায় মেতে উঠছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিনি উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বলে জানান।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইদুল ইসলাম বলেন, কাঁচপুর এলাকায় লোকজনকে ঘর থেকে বের হওয়া ঠেকাতে তাঁরা হিমশিম খাচ্ছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিদিন অভিযান চালানো হচ্ছে। ধীরে ধীরে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কাঁচপুরে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।