হরিপুর লকডাউন নয়, হবে চলাচল সীমিত

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলায় গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে আজ শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে ১৪ দিনের জন্য লকডাউনের (অবরুদ্ধ) ঘোষণা করে স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু আজ দুপুরে ঘোষণা দেওয়া হয়, লকডাউন নয়, সীমিত করা হয়েছে চলাচল।

উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় লোকজন জানান, হরিপুর উপজেলার অসংখ্য মানুষ ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে কাজ করেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় সম্প্রতি এসব এলাকা লকডাউন করে প্রশাসন। এরপর গোপনে এসব এলাকা থেকে মানুষ হরিপুর ফিরতে শুরু করেন। বাড়ি ফেরা এসব মানুষের মাধ্যমে উপজেলায় করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকে বৃহস্পতিবার বিকেলে হরিপুর উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি এক জরুরি সভা আহ্বান করে। সভায় করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুরো উপজেলা লকডাউন ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে একটি বিজ্ঞপ্তির আকারে ইউএনও আবদুল করিমের সই করা লকডাউনের সিদ্ধান্তটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে ১৪ দিনের জন্য করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুরো উপজেলাকে লকডাউন ঘোষণা করা হলো। ওই বিজ্ঞপ্তিতে ছয়টি অবশ্যপালনীয় বিষয় উল্লেখ করা হয়।

এরপর আজ দুপুর ১২টার দিকে এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক কে এম কামরুজ্জামান সেলিমকে ফোন করা হলে তিনি জানান, ইউএনওর বিজ্ঞপ্তিতে অনেকটা না বুঝেই লকডাউন শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। আসলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে যেসব পালনীয় বিষয়গুলো বলা হয়েছে, তা এরই মধ্যে মেনে চলা হচ্ছে। সেটা লকডাউন বলা ঠিক হবে না।

এরপর বেলা একটার দিকে হরিপুরের ইউএনও তাঁর ফেসবুক পেজে সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি পোস্ট করেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি গতকালের লকডাউনের বিষয়ে একটি নোটিশ সবার শেয়ার করার কারণে। এখানে ছোট্ট একটু ভুল থেকে গিয়েছে। হরিপুর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এটি অফিস আদেশ বা অফিস স্মারক হিসেবে জারি হয়নি। কেবল মাইকিংয়ের জন্য করা হয়েছিল। এখানে যেসব পয়েন্ট উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলো সবই বাস্তবায়ন করা হবে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে তা লকডাউনের মতো বৃহৎ একটি কার্যক্রম হবে না। এ জন্য আবারও ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। যাঁরা শেয়ার করেছেন, তাঁদের পোস্টগুলো ডিলিট করার জন্য অনুরোধ করছি।’ এরপর তিনি সেখানে একটি সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি জুড়ে দেন।

আগের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা সবকিছু ঠিক রেখে লকডাউনের কথাটির জায়গায় যান চলাচল সীমিত কথাটি ব্যবহার করেন। লকডাউনের বিজ্ঞপ্তিতে আজ শুক্রবার থেকে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দেওয়া হলেও পরের বিজ্ঞপ্তিতে তা উল্লেখ করেননি তিনি। পরের বিজ্ঞপ্তিতে তাঁর স্বাক্ষরও নেই।

ইউএনও আবদুল করিম বলেন, কয়েক দিনে করোনা সংক্রমিত এলাকা থেকে অসংখ্য মানুষ পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে হরিপুরে ঢুকে পড়েন। এই সংখ্যা এতই বেশি যে তাঁদের মাধ্যমে যদি করোনাভাইরাস ছড়িয়ে যায়, তবে তা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়বে। এ আশঙ্কা থেকেই উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় লকডাউনের প্রসঙ্গটি এসেছিল। পরে মাইকিংয়ের জন্য একটি বিজ্ঞপ্তিও প্রস্তুত করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে ভুলে লকডাউন শব্দটি চলে আসে। আসলে উপজেলা লকডাউন করা হয়নি। এখানে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যান ও মানুষজনের চলাচল সীমিত করা হয়েছে। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে ফিরে আসা লোকজনকে শনাক্ত করে সদস্যদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত পাঁচজনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।

জেলা প্রশাসক কে এম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, জেলা প্রশাসক বলছেন, বিষয়টি জানার ইউএনওকে বিজ্ঞপ্তিটি সংশোধিত করে প্রচার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। আসলে লকডাউন শব্দটি ব্যবহার করা ঠিক হয়নি। ইউএনওর বিজ্ঞপ্তির পালনীয় বিষয়গুলো এলাকার লোকজন আগে থেকেই পালন করেছেন। এটা লকডাউন বলা যায় না। এটা হবে চলাচল সীমিত করা।