লকডাউনের পর ঘরমুখী সাদুল্যাপুরবাসী

লকডাউন ঘোষণার পর গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলা শহর ফাঁকা হয়ে গেছে। ছবিটি শহরের হাসপাতাল রোড থেকে আজ শনিবার সকালে তোলা। ছবি: প্রথম আলো
লকডাউন ঘোষণার পর গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলা শহর ফাঁকা হয়ে গেছে। ছবিটি শহরের হাসপাতাল রোড থেকে আজ শনিবার সকালে তোলা। ছবি: প্রথম আলো

লকডাউন ঘোষণার পর গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলা শহর ফাঁকা হয়ে গেছে। শনিবার সকালে উপজেলা শহরের বাজারে লোকজন দেখা যায়নি। শহরের রাস্তা-ঘাটে লোকজনের উপস্থিতি ছিল কম। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে গাইবান্ধা জেলাকে গতকাল শুক্রবার লকডাউন ঘোষণা করা হয়। গতকাল বিকেল ৫টা থেকে এটি কার্যকর হয়। এরপরই বদলে যেতে থাকে উপজেলার চিত্র।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণে দেশের পাঁচটি হট স্পটের মধ্যে গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলা একটি। কিন্তু সাদুল্যাপুরের কেউ নিয়ম মানছিল না। উপজেলা শহরে ঢোকার পথে কাউকে বাধা দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল না। অনেক দোকানপাট খোলা ছিল। মোড়ে মোড়ে মানুষের আড্ডা ছিল। চায়ের দোকানে ভিড় ছিল। বিশেষত উপজেলা শহরের কাঁচাবাজার, হাসপাতাল রোড, মাদারগঞ্জ রোড, ভাতগ্রাম রোড, নলডাঙ্গা রোড ও কলেজ রোডে মানুষের ভিড় সব সময় লেগে থাকত। করোনা-আতঙ্কের মধ্যেও গত কয়েক দিন উপজেলা শহর সকাল ৭টা থেকে জমে উঠত। কিন্তু শনিবার সকাল ৯টাতেও লোকজনের তেমন দেখা মেলেনি।

উপজেলা শহরে শনিবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত শহর ফাঁকা। লোকজন ও যানবাহন চলাচল নেই। মানুষ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া শহরে বের হচ্ছেন না। যারা বের হচ্ছেন তাঁরা মাস্ক পরে বের হচ্ছেন।

উপজেলা শহরের কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'করোনা-আতঙ্কের মধ্যেও প্রতিদিন সকালে ক্রেতাদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হতো। কিন্তু আজ জিনিসপত্র বিক্রি করতে পারিনি। লকডাউনের ঘোষণার পর মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।' একই বাজারের চাল ব্যবসায়ী কাশেম মিয়া বলেন, 'আমার দোকান থেকে সকালেই বেশি চাল বিক্রি হয়। দুই-তিনজন কর্মচারী দিয়ে চাল বিক্রি করতে হয়। কিন্তু গতকাল গাইবান্ধা জেলা লকডাউন করার পর আজ সকালে একজনের কাছেও চাল বিক্রি করতে পারিনি।'

সাদুল্যাপুর উপজেলার দামোদরপুর গ্রামের রিকশাচালক বাবলু মিয়া বলেন, 'এই কয়দিন রিকশা চালিয়েছি। কিন্তু আজ ৯টা পর্যন্ত কোনো ভাড়া পাইনি। লোকজন নেই। রিকশায় যাবে কে? প্রতিদিন রিকশা চালিয়ে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা আয় হতো। এ দিয়ে সংসার চলতো। লকডাউন ঘোষণার পর শহর ফাঁকা হয়ে গেছে।'

শনিবার সকালে সাদুল্যাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নবী নেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, লকডাউনের পর শহর ফাঁকা হয়ে গেছে। বাইরের লোকজন শহরে যাতে ঢুকতে না পারেন, সে জন্য উপজেলা শহরের প্রবেশপথে বাধা দিচ্ছে পুলিশ।

গত ১১ মার্চ সাদুল্যাপুর উপজেলায় বিবাহোত্তর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে ৫ শতাধিক মানুষ উপস্থিত হন। এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা দুজন। গত ২২ মার্চ প্রবাসী দুজনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। গত ২৭ মার্চ তাদের সংস্পর্শে আসা আরও দুজনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। ৪ এপ্রিল সাদুল্যাপুরের একজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন।

গাইবান্ধার সিভিল সার্জন এবিএম আবু হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, শনিবার পর্যন্ত জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচজন। পাঁচজনের মধ্যে গাইবান্ধা সদর হাসপাতালের আইসোলেশনে আছেন তিনজন, সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন এবং সাদুল্যাপুরে হোম আইসোলেশনে আছেন একজন। তবে ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) গত বৃহস্পতিবার জেলার আরও যে তিনজন আক্রান্তের কথা বললে, তাদের ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। সেই তিনজন হতে পারেন অন্য কোনো জেলায় বসবাসরত গাইবান্ধার বাসিন্দা।