টমেটোর ভালো ফলনেও কৃষকের মাথায় হাত

দিনাজপুরের গাবুড়ায় আড়তে টমেটো নিয়ে বসে আছেন কৃষক। কিন্তু পাইকারি ক্রেতার দেখা নেই। ফলন ভালো হলেও করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ব্যাপক লোকসানে পড়েছেন কৃষক। ছবি: প্রথম আলো
দিনাজপুরের গাবুড়ায় আড়তে টমেটো নিয়ে বসে আছেন কৃষক। কিন্তু পাইকারি ক্রেতার দেখা নেই। ফলন ভালো হলেও করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ব্যাপক লোকসানে পড়েছেন কৃষক। ছবি: প্রথম আলো

করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে চলাচল সীমিত। ফলে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে টমেটোর পাইকারি ক্রেতারা আসতে পারছেন না। স্থানীয় বাজারগুলোতে চাহিদার চেয়ে যোগান বেশি। ফলে একদিকে কমেছে দাম, অন্যদিকে পাকা টমেটো ক্ষেতের মধ্যে রাখাও সম্ভব হচ্ছে না। সব মিলিয়ে কৃষকের মাথায় হাত।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, দিনাজপুরে মূলত সদর ও চিরিরবন্দর উপজেলায় টমেটোর আবাদ বেশি হয়। ২০১৮-১৯ মৌসুমে দিনাজপুরে টমেটোর চাষ হয়েছিল ১ হাজার ১২১ হেক্টর জমিতে। ওই বছর টমেটোর উৎপাদন হয়েছিল ৫০ হাজার ২০৩ মেট্রিক টন। চলতি মৌসুমে ১ হাজার ১৫৪ হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদ করা হয়েছে। টমেটো মূলত শীতকালীন ফসল হলেও গ্রীষ্মকালে নাভী, রানী ও বিপুল প্লাস জাতের টমেটোর চাষ হয় বাণিজ্যিকভাবে।

গাবুড়া বাজার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এই বাজারে টমেটোর মৌসুমে ১৫০-২০০টি আড়তঘরে টমেটো খাঁচা করা হতো। এ বছর মাত্র ৪টি আড়তঘরে টমেটো বাছাই করে খাঁচায় ভরা হচ্ছে। প্রতি মণ টমেটো বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৮০ টাকা দরে। গত বছর প্রতি মণ টমেটো বিক্রি হয়েছে ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা দরে। টমেটোর মৌসুমে প্রতি দিন গড়ে ৯০-১১০টি ট্রাকে টমেটো নিয়ে যাওয়া হতো ঢাকা, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা শহরে। বর্তমানে দিনে ২-৩টি ট্রাকে টমেটো নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

টমেটোকে কেন্দ্র করে এই মৌসুমে একটা বাণিজ্য ছিল এখানে। মৌসুম শুরু হতে না হতেই ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, শরীয়তপুর থেকে পাইকাররা আসতেন। গাবুড়ায় অস্থায়ীভাবে গড়ে উঠতো হোটেল, আর চায়ের দোকান। প্রায় দুই মাস থাকত এই অবস্থা। এ বছর এসবের কিছুই নেই। চারপাশে কেমন সুনশান নিরবতা। কুলি–শ্রমিকদের দৌঁড়ঝাপ নেই, তাড়াহুড়ো নেই কৃষক কিংবা পাইকারের। টমেটোর মৌসুমে স্কুল–কলেজ পড়ুয়া অনেক শিক্ষার্থী এখানে ঘণ্টাব্যাপী শ্রম দিয়ে কিছু টাকা আয় করত।

এই বাজারে শরীয়তপুর থেকে টমেটো কিনতে আসা ফয়জুল হাওলাদার বলেন, ‘প্রায় ২ সপ্তাহ হলো টমেটো কিনতে আসছি। আসার কোনো নিয়তই ছিল না। কিন্তু কৃষকদের ফোনের পর ফোনে আসতে হয়েছে। আমরা যে মাল কিনব বেশি করে, সেটাও পারছি না। ঢাকায় মাল নিয়ে যাই। কিন্তু কিনবে কে? বাজারে তো লোকই কমে গেছে।’

অন্য এক পাইকারি ক্রেতা বলেন, ‘প্রায় ১০ বছর ধরে এই বাজারে টমেটো কিনতে আসি। এখানকার অনেক কৃষককে টাকা দিয়ে রেখেছি। তাঁরা সেই টাকায় ফসল ফলান। ফসল উঠলে আমরা নিয়ে যাই। কিন্তু এখন গাড়ি চলে না, লোকজনও নাই। শুধু কৃষকই না, ব্যবসায়ীরাও বেশ ঝামেলায় পড়েছি।’

চিরিরবন্দর থেকে টমেটো নিয়ে এসেছেন আবদুস সালাম। জানালেন, প্রায় ৩ বিঘা জমিতে টমেটোর আবাদ করেছেন তিনি। গত বছর টমেটো বিক্রি করেছেন ৫ লাখ টাকার। গত বছরের চেয়ে এবার ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে ১ লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁকে।