১০ জনের করোনা শনাক্ত, মুন্সিগঞ্জ লকডাউন

মুন্সিগঞ্জের পাঁচটি উপজেলায় দুই নারীসহ ১০ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তাঁদের মধ্যে দুজন গজারিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা। এ অবস্থায় আজ শনিবার দুপুর থেকে পুরো জেলা লকডাউন করা হয়েছে।

মুন্সিগঞ্জের সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল শুক্রবার মধ্যরাতে আইইডিসিআর থেকে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে জানানো হয়, ৮ এপ্রিল যে ১৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করার পর পরীক্ষার জন্য আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছিল, সেখানে ৭ জনের করোনাভাইরাস পজিটিভ এসেছে। এ ছাড়া আজ সোয়া ১০টার দিকে জানানো হয়, ৯ এপ্রিল পাঠানো ২১ জনের নমুনার মধ্যে ৩ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে গজারিয়া উপজেলায় তিনজন, টঙ্গিবাড়ীতে চারজন এবং শ্রীনগর উপজেলা, সদর উপজেলা ও সিরাজদিখান উপজেলায় একজন করে রয়েছেন।
স্বাস্থ্য বিভাগের আক্রান্ত ওই দুই কর্মকর্তাসহ গজারিয়ার তিনজনকে রাতেই অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগ বন্ধ রাখা হয়েছে। যাঁরা আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে এসেছেন, তাঁদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মুন্সিগঞ্জের সিভিল সার্জন আবুল কালাম প্রথম আলোকে বলেন, আক্রান্ত সবার সঙ্গেই আইইডিসিআর এবং উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন কথা বলেছেন। রাতেই সংশ্লিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের জরুরি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে পুরো মুন্সিগঞ্জ জেলাকে লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামান তালুকদার।
মনিরুজ্জামান বেলা দুইটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, আজ করোনা প্রতিরোধ কমিটি সভা করে পুরো জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করেছে। জরুরি সেবা পরিবহন ছাড়া সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকবে। সাধারণ মানুষকে বাড়ি থেকে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। কেউ নির্দেশনা অমান্য করলে জনস্বার্থে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গজারিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা–যাওয়া বন্ধ
গজারিয়া হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্মরত দুজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কারণে আইইডিসিআরের নির্দেশে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ বন্ধ করে করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালটির চিকিৎসক ও অন্য স্টাফরা হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন। হাসপাতাল থেকে কেউ বের হতে বা ঢুকতে পারবেন না। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় রোগীরা।
স্থানীয় লোকজন জানান, হাসপাতালে আগের তুলনায় রোগীরা কম আসেন। তবে আজ থেকে জরুরি বিভাগ বন্ধ এবং বহির্বিভাগে চিকিৎসক নেই। হাসপাতালেও কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। এর ফলে এই উপজেলার রোগীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। দ্রুত রোগীদের জন্য বিকল্প কোনো ব্যবস্থার অনুরোধ জানিয়েছেন তাঁরা।
হাসপাতালটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তাসলিমা আনাম বলেন, শুক্রবার রাতে করোনার প্রতিবেদন পেয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ বন্ধ রাখা হয়েছে। ৩ জন চিকিৎসকসহ মোট ১১ জন হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন। তিনি আরও বলেন, সে ক্ষেত্রে রোগীদের সেবাদান ব্যাহত হচ্ছে। কয়েক দিনের মধ্যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম স্বাভাবিক করা হবে।
গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান সাদি প্রথম আলোকে বলেন, আইইডিসিআরের নির্দেশে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালে কয়েকজন রোগী ভর্তি আছেন। আপাতত হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশ ও ভেতর থেকে কাউকে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। হাসপাতাল লকডাউন কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাসপাতালকে লকডাউন করা না হলেও বাস্তবিক অর্থে লকডাউনের মতোই আছে।