শহরের কুকুরগুলোকে দুই বেলা খাবার দিচ্ছেন এসপি

শহরের রেলগেট এলাকায় খাবার খাচ্ছে অভুক্ত কুকুর। রাজবাড়ী, ১০ এপ্রিল। ছবি: প্রথম আলো
শহরের রেলগেট এলাকায় খাবার খাচ্ছে অভুক্ত কুকুর। রাজবাড়ী, ১০ এপ্রিল। ছবি: প্রথম আলো

সারা দেশের মতো রাজবাড়ীতে দোকানপাট, বাজার, হোটেল বন্ধ। এতে অভুক্ত থাকতে হচ্ছে বেওয়ারিশ কুকুরগুলোকে। খাবার না পেয়ে কোনো কোনো কুকুরের অবস্থা মৃতপ্রায়। অবশেষে কুকুরকে খাবার দিতে এগিয়ে এসেছেন পুলিশ সুপার। গত মঙ্গলবার থেকে কুকুরের জন্য প্রতিদিন দুই বেলা খাবার দেওয়া হচ্ছে।
পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার থেকে শহরের কুকুরগুলোকে খাওয়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। পাঁচ কেজি করে চালের খিচুরি রান্না করা হয়। সঙ্গে দেওয়া হয় গরু বা মুরগির মাংসের হাড়গোড়। রান্না করা খাবার কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে বিলি করেন। রাস্তার পাশে কাগজের ওপর খিচুড়ি দেওয়া হয়। খাবার পেয়েই ছুটে আসে অভুক্ত কুকুরগুলো।
স্বেচ্ছাসেবক স্মৃতি ইসলাম বলেন, ‘অভুক্ত কুকুরগুলো খাওয়ানোর জন্য আমরা প্রথমে বাড়িতে রুটি তৈরি করে খাওয়ানোর কথা ভেবেছিলাম। পরিকল্পনা ছিল স্বেচ্ছাসেবকেরা একেকজন একেকক দিন রুটি তৈরি করবে। বিষয়টি এসপি স্যার জানার পর তিনি খিচুড়ি খাওয়ার কথা বলেন। এরপর থেকে খাওয়ানো শুরু হয়েছে। এখন বিচ্ছিন্নভাবে খাওয়ানো হচ্ছে। তবে শহরের বেশ কয়েকটি স্থানে কুকুরকে খাওয়ানোর জন্য স্থায়ীভাবে মাটির পাত্র (চারি) বসানো হবে।’ পাশাপাশি কোথাও অভুক্ত কুকুর পেলে রুটিও খাওয়ানো হয় বলে জানিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক নেহাল আহমেদ।
কুকুরগুলোকে খাওয়ানোর বিষয়টি একটি অতিমানবিক কাজ উল্লেখ করে প্রথম আলো রাজবাড়ী বন্ধুসভার সভাপতি ও রাজবাড়ী সরকার আদর্শ মহিলা কলেজর সাবেক অধ্যক্ষ মো. নুরুজ্জামান বলেন, ‘সব প্রাণীর প্রতি মানুষের দায়িত্ব রয়েছে। প্রাকৃতিক খাদ্যশৃঙ্খল বজায় রাখতে প্রতিটি উদ্ভিদ ও প্রাণীর ভূমিকা রয়েছে। এই ইতিবাচক কাজ অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। তাঁকে ধন্যবাদ জানাই।’
এসপি মিজানুর রহমান বলেন, করোনাকালের এই সময়ে হোটেল, রেস্তোরাঁ, দোকানপাট সব বন্ধ রয়েছে। এতে করে কুকুরগুলো উচ্ছিষ্ট খাবার পাচ্ছে না। খেতে না পেরে হাড্ডিসার হয়ে গেছে। তারা মানুষ হলে খাবার চাইত। হয়তোবা বলত, ‘স্যারগো পেটে বড় খিদে। আপনি একমুঠো খাবার না দিলে কালই মরে রাস্তায় পড়ে থাকতে হবে।’ তা ছাড়া এখন মানুষের খারাপ সময় যাচ্ছে। ইচ্ছে থাকলেও কুকুরের খাওয়ানোর মতো বিলাসিতা আর কজনের আছে। কিন্তু ওদেরও বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। এ কারণেই অভুক্ত কুকুরগুলোকে খাওয়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করি।
রাজবাড়ী সদর উপজেলায় আজ শনিবার পাঁচজনের করোনাভাইরাস পরীক্ষার ফল পজিটিভ পাওয়া গেছে। বিকেলে পুরো জেলা লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। আগামী ১০ দিন লকডাউন কার্যকর থাকবে।