করোনায় অসহায়দের মধ্যে ত্রাণ নিয়ে ছুটে যাচ্ছেন শাহনাজ

খাগড়াছড়ির পানছড়ির সাঁওতালপাড়ায় ত্রাণ তুলে দিচ্ছেন শাহনাজ সুলতানা। ছবি: জয়ন্তী দেওয়ান
খাগড়াছড়ির পানছড়ির সাঁওতালপাড়ায় ত্রাণ তুলে দিচ্ছেন শাহনাজ সুলতানা। ছবি: জয়ন্তী দেওয়ান

শাহনাজ সুলতানা। তিনি পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের পরিবার কল্যাণ পরিদর্শক। নিজের নামে গড়ে তুলেছেন এস এস ফাউন্ডেশন। ছয় বছর ধরে প্রতি মাসে বেতনের একটি অংশ দিয়ে নানাভাবে অসহায় লোকজনকে সাহায্য করেন। থাকেন জেলা শহরের আনন্দনগর এলাকায়, এক ভাড়া বাসায়। তবে চলতি মাসের ৫ তারিখ থেকে তাঁর রুটিন পাল্টে গেছে। এখন অফিসের পর যে অবসর সময় পাচ্ছেন, খাদ্যসামগ্রী ঘরে ঘরে নিয়ে যাচ্ছেন।

গত কয়েক দিনে খাগড়াছড়ি সদর, পানছড়ি, মহালছড়ি, মাটিরাঙ্গা ও দীঘিনালা উপজেলায় প্রত্যন্ত এলাকার প্রায় এক হাজার পরিবারের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন। এর আগে গত ১৭ মার্চ খাগড়াছড়িতে তিনি প্রথম করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতা বার্তা হিসেবে শহরের অটোরিকশাচালকসহ বিভিন্ন জনকে দুই হাজার মাস্ক ও লিফলেট বিতরণ করেন। এ ছাড়া শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোয় করেছেন হাত ধোয়ার ব্যবস্থা।

গত শুক্রবার সকালে জেলার পানছড়ি সাঁওতালপাড়া, আচাইমহাজনপাড়া, যৌথ খামার, কলাবাগানসহ ২৫টি গ্রামে ঘরে ঘরে গিয়ে প্রতিবন্ধী, বিধবা, দরিদ্র ১০০ পরিবারের মধ্যে ১০ কেজি চাল, ২ কেজি আলু, ১ কেজি তেল, ১ কেজি লবণ, ১ কেজি পেঁয়াজ ও ১টি সাবান তুলে দেন শাহনাজ।

ত্রাণ পাওয়ার পর দিনমজুর বিধবা রূপসী সাঁওতাল বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে তিন মেয়েকে পেট ভরে খেতে দিতে পারিনি। ভেবেছিলাম বিহু উৎসবেও সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতে পারব না। এই চাল–ডাল দিয়ে বিহু ভালোভাবে কেটে যাবে।’

শাহনাজ সুলতানা বলেন, ‘দুর্গম অনেক এলাকায় মানুষের ঘরে খাবার নেই—এই সংবাদ শোনার পর এগিয়ে এসেছি। মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করা ভাগ্যের ব্যাপার। তাই বেতনের একটি অংশ এবং কিছু জমানো টাকা দিয়ে এই সাহায্য করে যাচ্ছি।’

শাহনাজের এ কাজে উৎসাহ দিচ্ছেন ব্যবসায়ী স্বামী মো. শাহানশাহ এবং একমাত্র মেয়ে ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাইশা তাবাসসুম।

খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শানে আলম বলেন, ‘জেলার বিভিন্ন উপজেলায় শাহনাজ সুলতানাকে মাস্ক, ত্রাণ ও সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করতে দেখেছি। ওনার মতো যদি সমাজে আরও কেউ এগিয়ে আসত, তাহলে অনেক পরিবারের উপকার হতো।’