নীরবে-নিভৃতে বর্ষ বিদায়-বরণের সাংগ্রাইং উৎসব শুরু

বান্দরবানে মারমা ও ম্রোসহ পাঁচটি জাতিগোষ্ঠীর পুরোনো বছরের বিদায় ও নতুন বছরের বরণের সার্বজনীন ‘সাংগ্রাইং’ উৎসব আজ মঙ্গলবার শুরু হয়েছে। প্রতি বছর সপ্তাহব্যাপী এ উৎসবকে ঘিরে মারমা-ম্রোরা আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে উঠলেও এবারে করোনাভাইরাসের কারণে নীরবে-নিভৃতে ঘরে ঘরে পালন করা হচ্ছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সর্বজনীন সামাজিক-সাংস্কৃতিক বৈসাবি উৎসবকে মারমা ভাষায় সাংগ্রাইং বলা হয়। চাকমা, তঞ্চঙ্গ্যা ও ত্রিপুরাদের ১২ এপ্রিল শুরু হওয়া বৈসাবি উৎসব মঙ্গলবার শেষ হয়েছে। মারমাদের সাংগ্রাইং ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলার কথা। একই সঙ্গে ম্রো, খুমি, খেয়াং ও চাকরা সাংগ্রাইং উৎসব উদ্‌যাপন করেন।

বান্দরবানের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের (কেএসআই) সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা উ চ নু মারমা জানিয়েছেন, মারমাদের অনুসরণ করা মিয়ানমারের বর্মী চন্দ্র বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী মঙ্গলবার সাংগ্রাইং অ্যাকোয়া বা সংগ্রাইংয়ের শুরুর দিন। শুরুর দিনে প্রতিবছর মঙ্গলশোভযাত্রা ও বৌদ্ধ ভিক্ষুদের নেতৃত্বে বুদ্ধমূর্তি স্নান করানো হয়। ঘরবাড়ি ধুয়েমুছে চন্দনজল ছিটিয়ে পুত পবিত্র করা, এক ধরনের বুনোফুল দিয়ে সাজানো হয়। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধের সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে কোনো আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন করা হয়নি।

বুধবার সাংগ্রাইং উৎসবের মূলদিন। মূল উৎসবে মারমাদের মৈত্রী পানি বর্ষণ উৎসবের আয়োজন করার সাংগ্রাইং উৎসবের অপরিহার্য অংশ। এবারে সেই পানি উৎসবও হচ্ছে না। নীরবে-নিভৃতে বৃহস্পতিবার মাহাসাগ্রাইং পোয়ে বা মহাসাংগ্রাইং উৎসবকে বিদায় দেওয়া হবে বলে কেএসআই সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা উ চ নু মারমা।

জেলা শহরের মধ্যমপাড়ার উনিহ্লা হেডম্যান (মৌজাপ্রধান) ইয়ামং মারমা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস মানুষের সামাজিক চরিত্রই বদলে দিয়েছে। প্রত্যেক পরিবার যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী বাসাবাড়িতে সাংগ্রাইং উৎসব পালন করছেন। কেউ কারও ঘরে বা বাসাবাড়িতে যাওয়ারও সুযোগ নেই। তিনি আরও বলেন, এবারের উৎসবে বৌদ্ধবিহারে পর্যন্ত যাওয়া সম্ভব হয়নি। জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসন থেকে করোনা সতর্কতার জন্য বাড়ির বাইরে বের না হওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমা সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, সাংগ্রাইং উৎসবের কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিকতা থেকে বিরত থাকার বৌদ্ধভিক্ষুসহ সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। সেখানে সবাই একমত হয়েছেন উৎসবে কোনো জনসমাগমের আনুষ্ঠানিকতা না করার জন্য। এ জন্য জেলার ৩৬০টি বৌদ্ধবিহারে ২৫ কেজি করে চাল ও অন্যান্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।