ফরিদপুরে করোনা শনাক্ত করার পরীক্ষা শুরু হয়নি

ফরিদপুরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় তোড়জোড় আছে। তবে প্রস্তুতিতে অনেক ঘাটতি দৃশ্যমান। জেলায় আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ভাইরাস শনাক্ত করার পরীক্ষা শুরু হয়নি। করোনার রোগীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের শয্যা তৈরি হচ্ছে। তবে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) ইউনিটও এখনো পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। রয়েছে ব্যক্তিগত সুরক্ষার জন্য উপযুক্ত পোশাক ও মাস্কের ঘাটতি।

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ সূত্রে জানা যায়, কলেজ ভবনের চতুর্থ তলায় করোনাভাইরাসের পরীক্ষার জন্য গত রোববার পিসিআর যন্ত্র স্থাপন করা হয়েছে। তবে এই যন্ত্র চালাতে অটো ক্লিন (স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিষ্কার) যন্ত্র প্রয়োজন। সেটি না আসায় আজও এখানে করোনাভাইরাসের পরীক্ষা শুরু করা যায়নি।

জানতে চাইলে কলেজের অধ্যক্ষ এস এম খবিরুল ইসলাম বলেন, যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পিসিআর যন্ত্র সরবরাহ করেছে, তারা অটো ক্লিন যন্ত্র সরবরাহ করেনি। ফলে পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গতকালও যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা জানিয়েছে, যন্ত্রটি বিদেশ থেকে আসামাত্রই সরবরাহ করা হবে। ১৮ এপ্রিল যন্ত্রটি সরবরাহ করতে পারবে বলে তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সেটি এলে ২২ বা ২৩ এপ্রিল থেকে এই ল্যাবে পরীক্ষা শুরু করা যাবে। যাঁরা এই পরীক্ষার কাজ করবেন, আজ থেকে তাঁদের প্রশিক্ষণ শুরু করা হবে।

সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালটি করোনা রোগী চিকিৎসার উপযোগী করে প্রস্তুত করা হচ্ছে। গত সোমবার এ কাজ শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে এই হাসপাতালে অন্য রোগী ভর্তি করা বন্ধ রয়েছে। আপাতত ৫০ জন রোগীর চিকিৎসার জন্য হাসপাতালটি প্রস্তুত করা হচ্ছে। প্রয়োজন হলে শয্যা বাড়িয়ে ১০০ করা হবে।

সিভিল সার্জন মো. ছিদ্দীকুর রহমান বলেন, এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কারও অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিটে স্থানান্তর করা হবে।

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মো. সাইফুর রহমান বলেন, এই হাসপাতালে ১৬ শয্যার আইসিইউ ইউনিট আছে। সেখানে ১৬টি ভেন্টিলেটর রয়েছে। তবে সেগুলো স্থাপনের পাঁচ বছরেও চালু না করায় নষ্ট হয়ে পড়েছিল। ঢাকা থেকে প্রকৌশলী দল এনে ১০টি ভেন্টিলেটর কার্যক্ষম করা হয়েছে। বাকিগুলো চালু করার কাজ চলছে। তিনি বলেন, ভেন্টিলেটর চালু হলেও আইসিইউ ইউনিট এখনো পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। এটি কার্যক্ষম করতে আরও সময় লাগবে। কিছু যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে।

সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে আরও জানা যায়, করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক, চিকিৎসক, নার্স, সুপারভাইজার, স্যাকমো, ওয়ার্ডবয়, আয়া ও সুইপার নিয়ে ৬১ সদস্যবিশিষ্ট দল গঠন করা হয়েছে। এ জাতীয় তিনটি দল গঠন করা হবে। প্রতিটি দল ৭ দিন করে চিকিৎসাসেবা দেবে। পরে ১৪ দিন করে তাঁদের কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে। জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসা দলের জন্য এ পর্যন্ত ২ হাজার ৪০০টি ব্যক্তিগত সুরক্ষা পোশাক (পিপিই) পাওয়া গেছে। কিন্তু এসব পিপিই পুরোপুরি সুরক্ষা দেওয়ার উপযোগী নয়। ১ হাজার ৮০০ মাস্ক পাওয়া গেছে। এর মধ্যে এন-৯৫ মানের কোনো মাস্ক নেই। চিকিৎসক ও কর্মীদের নিরাপত্তার জন্য কার্যকর পিপিই ও মাস্ক প্রয়োজন।

সিভিল সার্জন ছিদ্দীকুর রহমান বলেন, চিকিৎসা দলের সদস্যদের আবাসন, পোশাক, যাতায়াত, নিরাপত্তা ও খাবারের সরবরাহ নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসকের কাছে চাহিদা দেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, জেনারেল হাসপাতালে কার্যকর পিপিই ও মাস্ক সরবরাহ করা হয়নি, এ তথ্য ঠিক নয়। এই হাসপাতালে এ পর্যন্ত অন্তত ৫০০ কার্যকর পিপিই ও এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহ করা হয়েছে।

ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের সাংসদ খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, চিকিৎসকদের সুরক্ষাসহ সব চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা করা হবে। এই দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে সবার আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকতে হবে। রোগ শনাক্ত ও রোগীর সেবার ক্ষেত্রে যেন উদ্যমের অভাব না থাকে। পাশাপাশি কেউ যেন চিকিৎসাবঞ্চিত না হন, সে ব্যাপারেও সজাগ থাকতে হবে।