চিকিৎসকেরা ছুটছেন রোগীদের বাড়িতে

রোগীদের বাড়িতে ছুটছে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক দল। বাগমারা, রাজশাহী। ছবি: সংগৃহীত
রোগীদের বাড়িতে ছুটছে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক দল। বাগমারা, রাজশাহী। ছবি: সংগৃহীত

জ্বর, সর্দি, কাশিসহ বিভিন্ন সাধারণ রোগ নিয়ে আর হাসপাতালে যেতে হচ্ছে না রাজশাহীর বাগমারার লোকজনকে। চিকিৎসকেরাই ছুটে যাচ্ছেন রোগীদের বাড়ি বাড়ি। এভাবে এক সপ্তাহ ধরে রোগীদের খুঁজে খুঁজে বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছেন রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকেরা।

বিশেষ করে সাভার, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে ফেরা লোকজন খুঁজে বের করে বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এই উদ্যোগ এলাকায় সাড়া ফেলেছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের এই সংকটকালে হাতের কাছে সরকারি চিকিৎসক পাওয়ায় অনেকের মনোবল বেড়েছে।

করোনাভাইরাসের প্রকোপের কারণে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কমে গেছে। অনেকে ভয়ে হাসপাতাল যেতে আগ্রহ দেখান না। অভিযোগ রয়েছে, চিকিৎসকেরাও ফিরিয়ে দেন রোগীদের। কিছুদিন আগে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে জ্বর, সর্দি, কাশি ও গলাব্যথার রোগীদের হাসপাতালে না এসে মুঠোফোনের মাধ্যমে বাড়িতে বসে চিকিৎসা ও পরামর্শ নিতে বলা হয়েছে। এতে অনেক রোগী নাখোশ হন। তবে সপ্তাহখানেক ধরে রোগীরা বেশ খুশি। এখন চিকিৎসকেরাই খুঁজে খুঁজে রোগী বের করে বাড়ি গিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছেন। যাঁরা বাইরে থেকে কিনতে পারছেন না, তাঁদের হাসপাতাল থেকেই ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েকজন চিকিৎসকরে সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সপ্তাহখানেক আগ থেকে রোগীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ বিষয়ে চিকিৎসকেরা সম্মত হওয়ার পরেই প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়নে মাঠে নামে চিকিৎসকের দল।

প্রথমে ইউনিয়ন পর্যায়ের গিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা রোগীদের খুঁজে বের করেন। তবে চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা লোকজনদের বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। অনেক রোগী মুঠোফোনে তাঁদের সমস্যার কথা জানিয়ে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার কথা বলেন। এ রকম রোগী পেলেই মাঠপর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওই চিকিৎসক দলকে জানান। পরে অ্যাম্বুলেন্স বা নিজস্ব পরিবহনে পাঁচজনের চিকিৎসক দল ছুটে যায় রোগীর বাড়িতে। তাঁদের সমস্যার কথা জেনে প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে প্রয়োজনীয় পরামর্শ, ব্যবস্থাপত্র ও কিছু ওষুধ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে দেওয়া হয়। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সন্দেহ থাকলে নমুনাও সংগ্রহ করা হয় সঙ্গে সঙ্গে। গত এক সপ্তাহে ৩৮ জন রোগীকে বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। করোনার পরীক্ষার জন্য ১৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

উপজেলার কাচারী কোয়ালীপাড়া ইউনিয়নে ঢাকাফেরত একজন নারী (৪৩) জানান, তিনি বাড়িতে আসার পর হালকা জ্বর ও গলাব্যথা অনুভব করছিলেন। কয়েক দিন আগে হাসপাতালের একটি দল বাড়িতে এসে তাঁকে ওষুধ দিয়ে গেছে। বর্তমানে তিনি সুস্থ আছেন। একই রকম তথ্য দিয়েছেন মাড়িয়া ইউনিয়নের গাজীপুরফেরত অপর এক নারী। ঢাকাফেরত বাগমারার দ্বীপপুর ইউনিয়নের একজন রিকশাচালক (২৯) বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকেরা তাঁকে মুঠোফোনে চিকিৎসা দিয়ে সারিয়ে তুলেছেন। একটি ওষুধ কোম্পানিতে কর্মরত গাজীপুরফেরত আউচপাড়া ইউনিয়নের একজন যুবক (৩২) মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি বাড়িতে এসে করোনার সব উপসর্গ অনুভব করছিলেন। হাসপাতালে জানানোর আগেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দলটি তাঁর বাড়িতে গিয়ে ব্যবস্থাপত্র দেওয়া ছাড়াও নমুনা সংগ্রহ করেছে। বর্তমানে তিনি সুস্থ আছেন এবং তাঁর করোনার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে।

এ বিষয়ে চিকিৎসক দলের সদস্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম ও চিকিৎসা কর্মকর্তা মোতালেব হোসেন বলেন, মুঠোফোনে কিংবা স্বাস্থ্যকর্মীর কাছ থেকে তথ্য পেয়ে রোগীদের বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া সন্দেহভাজন রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। তাঁদের চিকিৎসায় সেরে যাচ্ছেন রোগীরা। বাড়িতে সরকারি চিকিৎসক পেয়ে রোগীরা খুব খুশি।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা গোলাম রাব্বানী প্রথম আলোকে বলেন, জ্বর, সর্দি, কাশির চিকিৎসা দেওয়া ছাড়াও অনেক ছোটখাটো সমস্যার সমাধান করা হচ্ছে। জটিল ও বড় রোগের চিকিৎসা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই করা হচ্ছে। বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার ফলে গুজব বা ভুল বোঝাবুঝি কম হচ্ছে। বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা দেওয়ায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসায় কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখন রোগীর চাপ নেই। পরিস্থিতি বিবেচনা করেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’