মেয়রের বাসায় হামলার অভিযোগ চার দিনেও রেকর্ড হয়নি

ত্রাণের চাল ভাগাভাগি নিয়ে বগুড়া পৌরসভার মেয়রের বাসায় হামলা, ভাঙচুরের চেষ্টাসহ দুজন কর্মচারীকে মারধরের অভিযোগে কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে করা মামলা চার দিনেও থানায় রেকর্ড হয়নি।

মেয়র এ কে এম মাহবুবর রহমান কয়েকজন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে গত সোমবার বগুড়া সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। সেখানে নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ করেন তিনি। মেয়র মাহবুবর রহমান বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা।

বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম বদিউজ্জামান বলেন, মেয়রের অভিযোগ তদন্ত করে সত্যতা মিললে, তা মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হবে।

রোববার বিকেলে শহরের জলেশ্বরীতলা এলাকায় মেয়রের বাসায় এ হামলা ও ভাঙচুরের চেষ্টা চালানো হয়। থানায় করা অভিযোগে তিনজন কাউন্সিলরের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁরা হলেন ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দ সার্জিল আহমেদ, ১০ নম্বর ওয়ার্ডের আরিফুর রহমান ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেজবাহুল হামিদ।

থানায় করা অভিযোগে মেয়র উল্লেখ করেন, মেয়রের ৪০ শতাংশ ও কাউন্সিলরের ৬০ শতাংশ হিসাবে সরকারি বরাদ্দ বণ্টনের রীতি রয়েছে। পৌরসভার ২১টি ওয়ার্ডে ২১ মেট্রিক টন চাল পুরোটাই কাউন্সিলরদের দেওয়া হয়। পরে জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করে আরও ১২ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ নেওয়া হয়। এই চাল সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সাতজন মহিলা কাউন্সিলরের নামে সাত মেট্রিক টন ও পাঁচ মেট্রিক টন মেয়রের মাধ্যমে বিতরণের কথা ছিল। কিন্তু কয়েকজন কাউন্সিলর এই চালও ভাগাভাগির জন্য মেয়রকে চাপ দেন।

এজাহারে বলা হয়েছে, চিকিৎসকের পরামর্শে মেয়র বাসায় কোয়ারেন্টিনে থেকে দাপ্তরিক কাজ করছেন। এ কারণে পৌরসভা কার্যালয়ে বসছেন না। ত্রাণের ১২ মেট্রিক টন চালের ডিও নেওয়ার জন্য রোববার বেলা ১১টার দিকে অভিযুক্ত কাউন্সিলররা হকিস্টিক হাতে তাঁকে কার্যালয়ে খুঁজতে থাকেন। একপর্যায়ে লাথি মেরে দরজা ভেঙে কার্যালয়ে ঢুকে সিসিটিভির হার্ডডিস্কসহ গুরুত্বপূর্ণ নথি নিয়ে যান। পরে তাঁরা বাসায় চড়াও হন। প্রধান ফটক বন্ধ থাকায় প্রাচীর টপকে বাসায় ঢোকেন। এ সময় তাঁরা নিচতলার ওষুধ কোম্পানির নিরাপত্তাকর্মী ও ডেলিভারিম্যানকে গালাগাল ও মারধর করেন। একপর্যায়ে তাঁদের কলার ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে তৃতীয় তলার কলাপসিবল গেট খুলতে বাধ্য করেন। তৃতীয় তলায় উঠে দরজায় লাথি দিয়ে ফটক ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। বাইরে থেকে তাঁকে হত্যার হুমকি দেন। এতে তাঁর স্ত্রী ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। পরে সদর ফাঁড়ি থেকে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

এ বিষয়ে বগুড়া সদর ফাঁড়ির উপপরিদর্শক জিল্লালুর রহমান বলেন, কাউন্সিলররা হট্টগোল করেছেন। তবে কাউকে মারধর বা ভাঙচুরের চেষ্টার কথা কেউ বলেননি।

জানতে চাইলে পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দ সার্জিল আহমেদ দাবি করেন, করোনার সংক্রমণ শুরুর পর থেকেই মেয়র পৌরসভায় আসছেন না। তিনি কোনো সভাও ডাকেননি। ১২ মেট্রিক টন ত্রাণ বরাদ্দ এলেও ডিও আটকে ছিল। বাধ্য হয়ে তাঁরা ১৮ জন কাউন্সিলর তাঁর বাসায় দেখা করতে যান। কিন্তু তিনি দেখা করেননি, দরজাও খোলেননি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে নিরাপত্তাকর্মীর সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি হয়েছে। কোনো মারধর বা হামলা-ভাঙচুর হয়নি।

কাউন্সিলর মেজবাহুল হামিদের দাবি, মেয়র কোয়ারেন্টিনে থেকে ৪০ শতাংশ বরাদ্দ নিয়ে দলীয় নেতা–কর্মীদের মধ্যে বিলি করতে চেয়েছিলেন।

পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও বগুড়া জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক পরিমল চন্দ্র দাসও দাবি করেন, মেয়রের সঙ্গে কথা বলতেই সব কাউন্সিলর মিলে বাসায় যাওয়া হয়েছিল। সেখানে হামলা-ভাঙচুরের চেষ্টার কোনো ঘটনা ঘটেনি।

১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও বগুড়া জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি সিপার আল বখতিয়ার বলেন, মেয়র এক মাস ধরে বাসায়। তিনি মাঠেও নেই, গরিব মানুষের পাশেও নেই। অথচ বাসায় থেকে ত্রাণের চালে ভাগ বসাতে চান।

যোগাযোগ করলে জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদ বলেন, পৌরসভায় বরাদ্দ দেওয়া ত্রাণের চাল মেয়র-কাউন্সিলররা কে কতটুকু বিতরণ করবেন, তার কোনো সরকারি বিধিমালা নেই। মেয়র বা মহিলা কাউন্সিলরকে আলাদা কোনো বরাদ্দও দেওয়া হয়নি।