ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ, জেলা পরিষদের সদস্য গ্রেপ্তার

কিশোরগঞ্জের জেলা পরিষদের সদস্য মো. কামরুজ্জামান। ছবি: প্রথম আলো
কিশোরগঞ্জের জেলা পরিষদের সদস্য মো. কামরুজ্জামান। ছবি: প্রথম আলো

ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে কিশোরগঞ্জ জেলা পরিষদের সদস্য মো. কামরুজ্জামানকে (৩৪) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার বিকেলে কটিয়াদী উপজেলার সহশ্রাম ধূলদিয়া ইউনিয়নের ফুলবাড়িয়া গ্রাম থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মো. কামরুজ্জামান ঢাকার তেজগাঁও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এবং আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় কর্মী। কটিয়াদী উপজেলা কোটায় তিনি জেলা পরিষদের সদস্য হয়েছেন।

জেলা পরিষদ সূত্র জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতির কারণে অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে। এই কারণে তাদের খাদ্য সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নেয় জেলা পরিষদ। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে কামরুজ্জামানের অধীনে কটিয়াদীতে ৪৫০টি পরিবারকে খাদ্য সহায়তার দেওয়ার জন্য টাকা পাঠানো হয়। ওই টাকা দিয়ে প্রতিটি পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল, ১ কেজি ডাল, ১ কেজি তেল, ২টি সাবান ও ২টি মাস্ক দেওয়ার কথা। জেলা পরিষদ সদস্য বিতরণ কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিলেও এসব খাদ্যসামগ্রী বিতরণের সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অথবা ইউএনও মনোনীত প্রতিনিধিকে উপস্থিত রাখার কথা রয়েছে। সে অনুযায়ী কটিয়াদীতে ইউএনও তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে নিযুক্ত করেন।

জেলা পরিষদ সূত্রে আরও জানা গেছে, কামরুজ্জামানের বাড়ি সহশ্রাম ধূলদিয়া ইউনিয়ন ফুলবাড়িয়া গ্রামে। তিনি খাদ্য সহায়তা ফুলবাড়িয়া গ্রামের লোকজনের মধ্যে বিতরণে উদ্যোগ নেন। গতকাল শুক্রবার তিনি ইউএনওর প্রতিনিধিকে না জানিয়ে দরিদ্রদের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করছিলেন। কিন্তু ওজনে চাল ও ডাল কম দেওয়ায় কয়েকজন সুবিধাভোগী বিষয়টি ইউএনওকে জানান। ইউএনও আকতারুন নেছা তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ জলিল, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সাইদুর রহমান ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আবদুল আলীমকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তাঁরা সেখানে গিয়ে দেখেন বেশির ভাগ প্যাকেটে দুই থেকে তিন কেজি করে পণ্য কম। পরে প্যাকেটগুলো জব্দ করা হয় এবং কামরুজ্জামানকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। রাতেই ত্রাণ আত্মসাতের অভিযোগে পিআইও জেলা পরিষদের সদস্য কামরুজ্জামানকে আসামি করে মামলা করেন।

এ বিষয়ে পিআইও আবদুল আলীম বলেন, মোট ২১৯টি প্যাকেট জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩২টি প্যাকেটে খাদ্যসামগ্রীর পরিমাণ ঠিকই ছিল। ১৮৭টিতে কম ছিল। বাকিগুলো বিতরণ করা হয়েছে, নাকি হয়নি, সে ব্যাপারে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি।

ইউএনও আকতারুন নেছা বলেন, ‘প্রথম কথা হলো বিতরণের সময় আমাদের প্রতিনিধি রাখা বাধ্যতামূলক ছিল। তিনি তা গোপন করেছেন। বিতরণও সঠিকভাবে হয়নি। এককথায় ত্রাণের পণ্য নির্দেশিত বিধি অনুসরণ না করে বিতরণ করাটাই অপরাধ।’

ওসি এম এ জলিল বলেন, মামলা হওয়ার পর জেলা পরিষদ সদস্য কামরুজ্জামানকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে এবং আজ শনিবার সকালে তাঁকে কিশোরগঞ্জ কারাগারে পাঠানো হয়।

ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ বিষয়ে থানা হেফাজতে কামরুজ্জামান বলেন, প্রথমত, তিনি সরকারি প্রতিনিধি উপস্থিত রাখার বাধ্যবাধকতার বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন না। দ্বিতীয়ত, ৪৫০ জনের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের কথা থাকলেও অন্তত এক হাজার মানুষ সেখানে ভিড় করেছিলেন। তিনি মনে করেছেন, প্যাকেট থেকে কিছু পণ্যের পরিমাণ কমিয়ে সংখ্যা বাড়ানো গেলে অধিক মানুষের মুখে হাসি ফোটানো যাবে। অসৎ উদ্দেশ্যে নয়, শুধু সমন্বয় করার জন্য ভিন্ন কৌশল নিয়েছিলেন।’

এ বিষয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘খাদ্য সহায়তা পাঠানোর আগে ও পরে প্রত্যেক সদস্যকে ভালো করে সতর্ক করে দিয়েছি, প্রত্যেকে যেন সরকারি বিধি অনুসরণ করে শেষ করে। কিন্তু প্রমাণ মিলেছে, কামরুজ্জামান সেই বিধি অনুসরণ করেননি।’