ঋণ পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় টমেটোচাষিরা

মাঠ থেকে টমেটো তুলছেন এক চাষি। সম্প্রতি কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বিটমান গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো
মাঠ থেকে টমেটো তুলছেন এক চাষি। সম্প্রতি কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বিটমান গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে লকডাউন থাকায় কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার টমেটোচাষিরা দুই সপ্তাহ ধরে ঢাকাসহ দেশের অন্য বাজারগুলোতে টমেটো বিক্রি করতে পারছেন না। কেউ কেউ বিক্রি করলেও দাম খুব কম পাচ্ছেন। এ অবস্থায় ঋণ পরিশোধ করা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ছেন তাঁরা।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় চলতি রবি মৌসুমে মোট ৭ হাজার ৫০০ হেক্টর কৃষিজমিতে সবজির আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে টমেটোর আবাদ হয় ৩০০ হেক্টর জমিতে। উপজেলার ইলিয়টগঞ্জ দক্ষিণ, সুন্দলপুর, বারপাড়া, গোয়ালমারী, দাউদকান্দি উত্তর ইউনিয়ন ও পৌরসভায় ব্যাপকহারে কৃষকেরা টমেটোর আবাদ করেছেন। এবার প্রতি হেক্টর জমিতে টমেটো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৪০ মেট্রিক টনের বেশি।

গত সোমবার থেকে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, খেতগুলোর ৫০ থেকে ৯০ শতাংশ টমেটো জমিতে পেকে গেছে। অবশিষ্ট টমেটো খেতে আধা পাকা রয়েছে।

উপজেলার বিটমান গ্রামের কৃষক মোখলেছুর রহমান বলেন, চলতি বছর তিনি এনজিও ও স্বজনদের কাছ থেকে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে দুই একর ১০ শতাংশ জমিতে টমেটোর আবাদ করেছেন। রোগবালাই না ছড়ানোয় এবং আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার টমেটোর ফলন অন্য বছরের তুলনায় ভালো হয়েছে। প্রতি শতাংশ জমিতে ১০ থেকে ১১ মন টমেটোর ফলন হয়েছে। প্রথম দিকে টমেটোর দামও ভালো ছিল। কিন্তু গত দুই সপ্তাহ ধরে করোনাভাইরাসের কারণে বাজারে টমেটোর দাম দ্রুত কমে গেছে। লাভের বিপরীতে লোকসান গুনতে হচ্ছে। এখন কী করবেন তাই ভাবছেন।

মোখলেছুর রহমান বলেন, পিকআপ ভ্যানে করে টমেটো ঢাকায় নিয়ে দোকানদারের দেখা পাননি। দীর্ঘ অপেক্ষার পর ৫৫ মণ টমেটো ফেলে চলে আসতে হয়। কারণ, বাড়ি পর্যন্ত ওই টমেটো আনতে গেলে আবার ভাড়া গুনতে হবে। অথচ বাজার ভালো হলে প্রতি ২৬ কেজি টমেটো ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি করতে পারতেন। এভাবে চললে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে ঘুরতে হবে।

দশপাড়া গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, তিনি নিজের ৭৫ শতক জমিতে টমেটোর আবাদ করে দেড় লাখ টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করেছেন। এ পর্যন্ত মাত্র ৩২ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন। টমেটো খেতেই ফেলে রাখবেন কি না ভাবছেন। কারণ, টাকা খরচ করে হাটে নিয়ে গেলে আরও বেশি লোকসান হয়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সারোয়ার জামান বলেন, রবি মৌসুমে আবাহাওয়া অনুকূলে থাকায় দাউদকান্দি উপজেলায় টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণে কৃষকেরা সেগুলো বড় বড় বাজারে বিক্রি করতে পারছেন না। এ অবস্থা চলতে থাকলে কৃষক বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়বেন। আর ভবিষ্যতেও টমেটো চাষে কৃষক আগ্রহ হারাবেন।