হয়রানি করলে বাড়িওয়ালাদের গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হবে

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। ফেসবুক থেকে নেওয়া
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। ফেসবুক থেকে নেওয়া

করোনাভাইরাস মোকাবিলায়ে সামনে থেকে যাঁরা যুদ্ধ করছেন, সেই চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, চিকিৎসা–সংশ্লিষ্ট কাউকে যদি রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের কোনো বাড়িওয়ালা বা ব্যক্তি কোনো ধরনের হয়রানি করেন, তবে তাঁদের বাসার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

আজ শনিবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে তিনি এ কথা বলেন।

নসরুল হামিদ বলেন, ‘করোনা মোকাবিলায় যাঁরা নিজেদের জীবন বিপন্ন করে এগিয়ে এসে মানুষকে সেবা দিচ্ছেন, সেই চিকিৎসকদের কোনো রকম হয়রানি না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রী নিজে দিয়েছেন। এরপরও আমরা খবর পাচ্ছি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের হয়রানি করছেন কিছু বাড়িওয়ালা। কেউ বাড়ি ছেড়ে দিতে বলছেন, কাউকে চাকরি ছেড়ে বাসায় বসে থাকতে বলছেন। যাঁরা এই ভয়াবহ মহামারির সময় নিজের জীবন তুচ্ছ করে লড়াই করছেন, তাঁদের যখন অভিবাদন জানানোর কথা, সেটি না করে উল্টো হয়রানি করা হচ্ছে। এমন ধরনের বাড়িওয়ালার বিষয়ে আমাদের পরিষ্কার সতর্কবার্তা হলো, যদি কোনো চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী হয়রানির অভিযোগ করেন, তাহলে ওই সব বাড়িওয়ার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে।’

গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর ওয়েবসাইটে দেওয়া হটলাইনে কল করে হয়রানির কথা জানাতে হবে বলেও প্রতিমন্ত্রী জানান।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক এলাকায় কিছু মুরব্বি দাঁড়িয়ে গেছেন। তাঁরা চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের এলাকায় প্রবেশের ওপর নানা রকম বিধিনিষেধ জারি করছেন। আমাদের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই মানুষকে সেবা দিচ্ছেন। অহেতুক আতঙ্ক না ছড়ানোর জন্য তিনি অনুরোধ করেন। তবে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের যদি কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি কোনো এলাকায় হয়রানি করেন, তাহলে তাঁর বাড়ির বিদ্যুৎ ও গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে।’

নসরুল হামিদ বলেন, চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়াও করোনার এই মহামারির সময় অনেকে জরুরি সেবা দিচ্ছেন। তা ছাড়া সংবাদকর্মীরা রাত–দিন পরিশ্রম করছেন যথাযথ তথ্য সরবরাহের জন্য। এ রকম জরুরি সেবা প্রদানকারী কারোর বিরুদ্ধে কোনো বাড়িওয়ালা বা ব্যক্তি হয়রানি করলে তাঁর বাড়ির বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংযোগ কেটে দেওয়া হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ইতিমধ্যে উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র বলেছেন, হয়রানি করলে সিটি করপোরেশন বাড়ির বর্জ্য বা ময়লা নেবে না। আর আমরা বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পরিষ্কার বার্তা পাঠাচ্ছি কিছু বাড়িওয়ালা ও ব্যক্তির জন্য।’

নসরুল হামিদ বলেন, পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার সব রকম চেষ্টাই করেই যাচ্ছে। সুনাগরিকের দায়িত্ব হলো, সরকারকে সহযোগিতা করা। সেটি না করে যাঁরা উল্টো স্বাস্থ্যসেবা সংকটে ফেলার চেষ্টা করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে দ্বিধা করবে না।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যখন সারা দেশ বন্ধ হয়ে আছে, তখন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের সব সেবা দিয়ে যাচ্ছেন আমাদের কর্মীরা। কয়েক দিন আগে রাজধানীর উলন বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রটিতে আগুন ধরে পুড়ে যায়। মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যে আমাদের প্রকৌশলী ও কর্মীরা সেখানে আরেকটি যন্ত্র স্থাপন করে বিদ্যুৎ সরবরাহ ফের চালু করেছেন। এ রকম একটা পরিস্থিতিতে এটি অকল্পনীয়, অসাধারণ ঘটনা।’

নসরুল হামিদ বলেন, সারা দেশে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীরা ছোট ছোট দল গঠন করে সেবা অব্যাহত রেখেছে। কোথাও বিদ্যুৎ সরবরাহ সমস্যা দেখা দিলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এসব কর্মী সেখানে ছুটে যাচ্ছেন। তাঁদের সুরক্ষার জন্য যথাসাধ্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। একইভাবে রাজধানীর দুই বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা ডিপিডিসি (ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি) ও ডেসকো (ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি) কর্মীরা বাড়ি বাড়ি ছুটে যাচ্ছেন এই মহামারির সময়ও। দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহ যাতে নিরবচ্ছিন্ন থাকে, সে জন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন অব্যাহত রাখা এবং তা সঞ্চালনের অত বড় দায়িত্ব খুব ভালোভাবে করে যাচ্ছে পিজিসিবি (পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ)।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘গ্যাসের চাহিদা এখন একটু কমে গেছে। কিন্তু গ্যাস উৎপাদনে কোনো সংকট যাতে না হয়, সেটি আগে থেকেই বলে দেওয়া হয়েছে। আমি অনলাইনে ভিডিওর মাধ্যমে বৈঠক করছি জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের কর্মরত কর্মকর্তাদের সঙ্গে। বিদেশ থেকে আমাদের এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি অব্যাহত রয়েছে। গ্যাস খাতে কোনো সমস্যা না হয়, সে জন্য তিতাসসহ অন্যান্য বিতরণ কোম্পানিতে বিশেষ টিম তৈরি করা হয়েছে। এসব টিম কোথাও কোনো সমস্যা হলে তা সমাধান করতে ছুটে যাচ্ছে।’

নসরুল হামিদ বলেন, ‘তেল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের সঙ্গে আমাদের অনলাইন বৈঠক হয়েছে, এলএনজি আমদানির বিষয়ে পেট্রোবাংলার সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। আমরা সব ধরনের জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য বিশেষ টিম তৈরি করেছি। এসব টিমের আবার বিকল্প টিম গঠন করা হয়েছে।আমাদের মূল লক্ষ্য হলো বিদ্যুৎ, গ্যাস ও তেল সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখা। আশা করছি কোনো সমস্যা হবে না।’