করোনা শনাক্ত হয়নি তবুও পরিবারটি অবরুদ্ধ

করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ পরীক্ষায় নেতিবাচক ফল এসেছে। বাড়ি অবরুদ্ধ করে রাখার ১৫ দিনও পার হয়েছে। কিন্তু অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে এখনও মুক্তি পায়নি একটি পরিবারের ২০ জন সদস্য। বাড়িতে উড়ছে লাল পতাকা।

পরিবারের অভিযোগ, অবরুদ্ধ থাকার সময় তাঁরা পায়নি কোনো ত্রাণ সামগ্রীও। নানা সংকটের মধ্য দিয়ে দিন পার করতে হচ্ছে তাঁদের।

ঘটনাটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউপি সাত নম্বর ওয়ার্ডের একটি গ্রামের। 

পরিবারের লোকজন প্রথম আলোকে জানান, ঢাকা থেকে ৩ এপ্রিল ঢাকা থেকে বাড়িতে ফিরেন এক সদস্য। তিনি পোশাককর্মী। তাঁর আসার পরপরই গ্রামে ও ফেসবুকে গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয় ওই নারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাড়িতে এসেছেন। গ্রামের মানুষ তাদের বাড়ি অবরুদ্ধ করে দেয়। লোকজনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এলাকার দুজন ইউপি সদস্যের উপস্থিতিতে গ্রামপুলিশ বাড়িতে উড়িয়ে দেয় লালা পতাকা। ১৫ দিন পার হলেও নামানো হয়নি লাল পতাকা।
ওই নারী কর্মী প্রথম আলোকে বলেন, 'এ গ্রামে ঢাকা থেকে আরও কয়েকজন এসেছে। কিন্তু কারো বেলায় কোয়ারেন্টিন আরোপ করেনি গ্রামের প্রভাবশালীরা। কোনো কোনো প্রভাবশালীর ছেলেরাও এসেছে গ্রামে,তাঁরা ঠিকই ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে জেনেছি। কিন্তু আমরা গরিব বলে ও আমি নারী বলে আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয়েছে এবং বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে।ফেসবুকে অপপ্রচার করা হয়েছে। এরপর আমার ও ভাইদের মোবাইল ফোনে অসংখ্য কল এসেছে বিষয়টি ব্যাখ্যা চেয়ে। ফোন ধরতে ধরতেই জীবন অতিষ্ঠ হয়ে গেছে আমাদের।'
ওই নারী আরও জানান,বাড়িতে আসার পরদিনই তাঁর নুমনা সংগ্রহ করে নিয়ে যায় স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন। দুদিন পর করোনা শনাক্ত হয়নি বলে প্রতিবেদন দেয়। এরপরও অবরুদ্ধ অবস্থা তুলে নেওয়া হয়নি। যৌথ পরিবারে সদস্য সংখ্যা ২০ জন। কেউই ভয়ে বাড়ির বাইরে পা ফেলতে পারেনি। এক ভাইয়ে পাউরুটি-বিষ্কুট-কেকসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় দ্রব্যের একটি ছোট দোকান ছিল। বন্ধ থাকায় মালামাল নষ্ট হয়েছে। বোরো ধানের আবাদ আছে এক বিঘায়। সেচ দেওয়ার জন্য জমিতে যেতে পারেনি।
ওই নারীর ভাই মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, অবরোধ অমান্য করে মরিয়া হয়েই আজ( শনিবার সকালে চেয়ারম্যান সাহেবে কাছে গিয়ে অবরোধ উঠিয়ে নিতে বলেছেন। তিনি (চেয়ারম্যান) ব্যবস্থা নিবেন বলেও আশ্বাস দেন। কিন্তু বিকেল পার হলেও কিছুই করেনি।
ওই নারীর ভাই বলেন, 'এলাকার মেম্বারকেও বলেছি। কাজ হয়নি। একঘরে হয়ে বাইরে বের হতে পারিনি। তবুও কোনো সাহায্য পাইনি। এ কেমন অবিচার। এ অবস্থা থেকে আমরা মুক্তি চাই।'
এ ব্যাপারে বিনোদপুর ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক ও ওয়ার্ড সদস্য জিয়াউল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাঁরা ফোন ধরেননি।
ওই গার্মেন্টসকর্মীর নমুনা পরীক্ষায় করোনাভাইরাস সনাক্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন জাহিদ নজরুল চৌধুরী।