করোনার চিকিৎসায় বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপনের দাবি

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ এবং করোনার চিকিৎসায় হাসপাতাল স্থাপনসহ বিভিন্ন দাবিতে বাসদের বিক্ষোভ। গতকাল বরিশাল নগরের সদর সড়কে। ছবি: প্রথম আলো
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ এবং করোনার চিকিৎসায় হাসপাতাল স্থাপনসহ বিভিন্ন দাবিতে বাসদের বিক্ষোভ। গতকাল বরিশাল নগরের সদর সড়কে। ছবি: প্রথম আলো

বরিশালে লকডাউনের সুযোগ নিয়ে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদ এবং করোনার চিকিৎসায় বিশেষায়িত হাসপাতাল, ভেন্টিলেটর স্থাপনসহ বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বাসদ। গতকাল শনিবার নগরের অশ্বিনীকুমার হলের সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা পোশাক (পিপিই) পরে কর্মসূচিতে অংশ নেন বাসদের নেতা-কর্মীরা। এ সময় তাঁদের হাতে নানা দাবিসংবলিত প্ল্যাকার্ড শোভা পায়। এতে করোনার চিকিৎসায় ১ হাজার শয্যার বিশেষায়িত হাসপাতাল, ২০০ ভেন্টিলেটর স্থাপনসহ পরীক্ষাগারে (ল্যাব) প্রতিদিন ১ হাজার নমুনা পরীক্ষার দাবি করা হয়।

স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণে সংকটাপন্ন রোগীদের ভেন্টিলেটরের মাধ্যমে কৃত্রিম শ্বাস–প্রশ্বাস চালু রাখার জন্য আইসিইউ প্রয়োজন হয়। এই বিভাগে শুধু বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউর সুবিধা আছে। এখানে ১৮টি ভেন্টিলেটর আছে। সম্প্রতি আরও ১০টি ভেন্টিলেটর এই হাসপাতালে সরবরাহ করা হয়েছে। সেগুলো স্থাপনের কাজ চলছে। তবে এসব ভেন্টিলেটর দিয়ে আইসিইউ পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষিত চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ানসহ জনবল পদায়ন করা হয়নি।

সমাবেশে জেলা বাসদের সদস্যসচিব মনীষা চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে করোনার দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে আধুনিকীকরণের কথা বলেছি। প্রতিদিনই করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তাই বরিশালে ১ হাজার শয্যার বিশেষায়িত করোনা হাসপাতাল চালু করতে হবে। পাশাপাশি করোনা ইউনিটে আইসিইউ ও ২০০ ভেন্টিলেটর স্থাপন করা জরুরি। এলাকায় এলাকায় জ্বর, সর্দি, কাশির রোগী থাকলেই বা কারও সন্দেহ হলেই যেন পরীক্ষা করাতে পারেন, তাই প্রতিদিন অন্তত ১ হাজার জনের নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা দরকার। এলাকায় এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক দল করে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার। অবিলম্বে বাজার নিয়ন্ত্রণসহ এসব দাবি বাস্তবায়ন করতে হবে।’

বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এই কলেজে ৮ এপ্রিল করোনা পরীক্ষাগার চালু করা হয়। পরদিন রাতেই পরীক্ষাগারটির পিসিআর যন্ত্রের বায়োসেফটি কেবিনেট নামের একটি যন্ত্রে ত্রুটি দেখা দেয়। এরপর যন্ত্রটি প্রতিস্থাপন করা হলেও এর পরীক্ষার সক্ষমতা কমে চার ভাগের এক ভাগে নেমে যায়। ফলে আগে যেখানে পরীক্ষাগারটিতে প্রতিদিন ৯৪টি নমুনা পরীক্ষা সম্ভব হতো, এখন সেখানে ২০টির বেশি করা যাচ্ছে না।

বাসদের সমাবেশে বক্তারা বলেন, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় লকডাউনের সুযোগে প্রতিদিনই চাল, ডাল, তেলসহ প্রায় প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এক সপ্তাহে পাইকারি বাজারে মোটা চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৬ টাকা, ডালে ১৪, পেঁয়াজ ২৫, তেল ১০ ও লবণ ৪ টাকা। প্রশাসনকে জানানোর পরও বাজার নিয়ন্ত্রণে কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি। আবার অপর্যাপ্ত ত্রাণ প্রদানেও স্বজনপ্রীতি এবং দলীয়করণ করা হচ্ছে। তাঁরা অবিলম্বে করোনার দুর্যোগ মোকাবিলায় সর্বদলীয় সমন্বয় কমিটি গঠনের দাবি জানান।

সমাবেশে বক্তারা কয়েক দফা দাবি তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে চাল, ডাল, তেল, আলু, পেঁয়াজ, লবণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি রোধ, ত্রাণচোরদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, ওয়ার্ডভিত্তিক তালিকা করে প্রতিটি পরিবারকে প্রয়োজন অনুযায়ী সাপ্তাহিক ত্রাণ সরবরাহ, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি, রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনকে যুক্ত করে করোনা মোকাবিলার উদ্যোগ, চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের পর্যাপ্ত পিপিই সরবরাহ এবং আবাসন ও পরিবহন সুবিধা নিশ্চিত করা, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, সাংবাদিক, পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ করোনা দুর্যোগ মোকাবিলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার ঝুঁকি ভাতা নিশ্চিত করা, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ বছর সব ফি মওকুফ, প্রতি মণ ১ হাজার ২০০ টাকা দরে খোদ কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় এবং সব কৃষিঋণ মওকুফ, বকেয়া বেতনসহ সব প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক, কর্মচারী-কর্মকর্তাদের মাসের ৫ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধ এবং পাড়া-মহল্লায় জীবাণুনাশক ও মশার ওষুধ স্প্রে করা।