ঠাকুরগাঁওয়ে পিকআপের ত্রিপল সরাতেই বেরিয়ে এলো মানুষ

পিকআপে ত্রিপল মুড়িয়ে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছিল। ছবি: সংগৃহীত
পিকআপে ত্রিপল মুড়িয়ে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছিল। ছবি: সংগৃহীত

চারদিক সুনসান। রাতের আঁধার ভেঙে মহাসড়ক ধরে এগিয়ে এলো গাড়ির বাতি। তা নজরে পড়তেই উঠে দাঁড়ালেন তল্লাশি চৌকির পুলিশ সদস্যরা।থামার ইঙ্গিত পেয়েই দাঁড়িয়ে গেল ত্রিপলে মোড়ানো একটি পিকআপ। আর ত্রিপল সরাতেই বেরিয়ে এলো মানুষের মুখ।এ ঘটনাটি গতকাল শনিবার রাতে ঠাকুরগাঁও জেলা সীমানার তল্লাশি চৌকির। 

একই সময়ে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যাত্রী পরিবহনের দায়ে সিরাজগঞ্জ থেকে আসা একটি ব্যক্তিগত গাড়ি আটক করা হয়। গাড়ির চালককে চার হাজার টাকা জরিমানা করে সিরাজগঞ্জে ফেরত পাঠানো হয়।

সারা দেশ করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণার কারণে দেশের জনগণকে অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া ও এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় চলাচলে নিষেধ করা হয়েছে। বিধিনিষেধ ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। এই অবস্থার মধ্যে ১১ এপ্রিল ঠাকুরগাঁও জেলাকে লকডাউন বা অবরুদ্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন।অন্যজেলা থেকে লোকজনের প্রবেশ ঠেকাতে জেলা সীমানায় বসানো হয়েছে পুলিশের তল্লাশি চৌকি। প্রশাসনের নজরদারির পরও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জসহ সংক্রামিত এলাকা থেকে নানা কৌশলে এলাকায় আসছেন মানুষ ।


গতকাল রাতে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ২৯ মাইল এলাকার তল্লাশি চৌকিতে একটি পিকআপ আটক করে পুলিশ। ত্রিপল মুড়িয়ে পিকআপটি যাত্রী নিয়ে ঠাকুরগাঁও যাচ্ছিল।
আটকের খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ-আল-মামুন, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) গোলাম মর্তুজা, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভিরুল ইসলাম সেখানে উপস্থিত হন।
একই সময়ে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যাত্রী পরিবহনের দায়ে সিরাজগঞ্জ থেকে আসা একটি ব্যক্তিগত গাড়ি আটক করা হয়। গাড়ির চালককে চার হাজার টাকা জরিমানা করে সিরাজগঞ্জে ফেরত পাঠানো হয়।
এর আগে গত বুধবার রাতে সদর উপজেলার রহিমানপুর এলাকায় যাত্রী নামানোর খবর পেয়ে পুলিশ একটি কাভার্ডভ্যান আটক করে। সে সময় চালক পালিয়ে গেলেও এক যাত্রী আটক হন। ওই কাভার্ডভ্যানে ২৮জন যাত্রী ছিলেন। কাভার্ডভ্যানের পেছনের পাল্লায় তালা ঝুলিয়ে চালক তাদের চট্টগ্রাম থেকে ঠাকুরগাঁওয়ে নিয়ে আসেন।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিদিনই ঢাকা-নারায়নগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মাইক্রোবাস, অ্যাম্বুলেন্স, মালবাহী গাড়ী করে লোকজন ঠাকুরগাঁও আসছেন। তাঁদের অনেকেই পুলিশের হাতে ধরা পড়ছেন।তবুও থেমে নেই মানুষজনের আসা।
একটি কলেজের অধ্যক্ষ আতাউর রহমান বলেন, সারা দেশ এখন করোনাভাইরাসের ঝুঁকিতে আছে। এসময় মানুষজন এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় চলাচল করলে করোনাভাইরাস এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন,গত কয়েকদিনে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যাত্রী নিয়ে এসে ঠাকুরগাঁওয়ের তল্লাশী চৌকিতে অনেক মাইাক্রোবাস, অ্যাম্বুলেন্স, পিকআপ ও ট্রাক আটক হয়। তাঁরা অন্য জেলার তল্লাশি এড়িয়ে কীভাবে ঠাকুরগাঁও জেলার সীমানায় ঢুকছেন সে প্রশ্নের উত্তর নেই।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, অন্য জেলা থেকে যাতে কেউ এ জেলায় প্রবেশ করতে না পারেন,সেজন্য জেলার সীমানায় তল্লাশি চৌকি বসানো হয়েছে। যাঁরা যাত্রী নিয়ে জেলায় আসার চেষ্টা করছেন, তাঁরা সেখানে আটক হচ্ছেন।
জেলা প্রশাসক কেএম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, জেলায় প্রবেশের পথগুলো কঠোর নজরদারিতে রাখতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাঁরা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এলাকায় আসার চেষ্টা করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি যাত্রীদের প্রতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হচ্ছে।
উল্লেখ্য গত ১১ এপ্রিল থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত জেলায় ছয়জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এই ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনই নারায়ণগঞ্জ ফেরত। গনপরিবহন বন্ধ থাকার পরও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তারা সকলেই ঠাকুরগাঁও এসেছেন।