রাজৈরে হত্যা মামলার আসামিকে কুপিয়ে হত্যা

নিহত প্রসেন বসুর বাড়িতে স্বজনদের আহাজারি। মৃধাবাড়ি গ্রাম, কদমবাড়ি ইউনিয়ন, রাজৈর, মাদারীপুর, ১৯ এপ্রিল। ছবি: প্রথম আলো
নিহত প্রসেন বসুর বাড়িতে স্বজনদের আহাজারি। মৃধাবাড়ি গ্রাম, কদমবাড়ি ইউনিয়ন, রাজৈর, মাদারীপুর, ১৯ এপ্রিল। ছবি: প্রথম আলো

মাদারীপুরের রাজৈরে জামিনে বেরিয়ে আসা একটি হত্যা মামলার আসামিকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। শনিবার গভীর রাতে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

নিহত যুবকের নাম প্রসেন বসু (৩১)। তিনি রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ি ইউনিয়নের মৃধাবাড়ি গ্রামের সতীশ বসুর ছেলে। পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রি ছিলেন প্রসেন।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, মৃধাবাড়ি গ্রামে গত বছরের ২৪ জানুয়ারি জমি নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে কদমবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) স্থানীয় ওয়ার্ডের সদস্য যুধিষ্ঠির বসু নিহত হন। এ ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার হন প্রসেনসহ বেশ কয়েকজন। আসামিদের মধ্যে কয়েকজন প্রায় ৬ মাস আগে জামিনে মুক্তি পান। কিন্তু বাদী পক্ষের হুমকির মুখে তাঁরা এলাকাছাড়া ছিলেন। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে তাঁরা কোথাও আশ্রয় না পেয়ে গত বুধবার এলাকায় ফিরতে বাধ্য হন। বিষয়টি জানতে পেরে প্রতিপক্ষের নিরোধ বসুর নেতৃত্বে একদল লোক জামিনে পাওয়া আসামিদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হামলায় প্রসেন বসু (৩১), মিহির বসু (২১), সতীশ বসু (৬৪) ও সজু বসুসহ (১৯) কয়েকজন গুরুতর আহত হন। প্রথমে তাঁদের রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে প্রসেন ও মিহিরকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে প্রসেনকে ঢাকার শ্যামলীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় যায় শনিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে মারা যান ওই যুবক।

প্রসেন বসুর মৃত্যুর খবর জানার পর রোববার তাঁর গ্রামের বাড়িতে আহাজারি শুরু করেন স্বজনেরা। প্রসেন বসুর স্ত্রী শিল্পী বসু বলেন, ‘আমার স্বামী বিনা অপরাধে জেলে ছিল। জামিনে বের হয়ে বাড়িতে এসেছিল। এর পরপরই ওরা আমার স্বামীকে ঘরে ঢুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। অবশেষে মরেই গেল আমার স্বামী। আমার ছোট মেয়েটা শুধু বাবা বাবা করছে? ওরে নিয়ে এখন আমি কীভাবে বাঁচব?’

অভিযোগের বিষয় নিরোধ বসু মুঠোফোনে বলেন, ‘আমাদের ফাঁসাতে ওরা নিজেরা মারামারি করেছে। এখন মারা গেছে। তাই আমাদের দিকে অভিযোগ দিচ্ছে। আমাদের কোনো লোক সেদিন প্রসেনদের ওপর হামলা চালায়নি।’

নিহত প্রসেন বসুর কাকা সুবদেব বসু বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। এতে আসামি হিসেবে নিরোধ বসুসহ ১৬ জনের নাম উল্লেখ কর করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ৭/৮ জনকে।

রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোন্দকার শওকত জাহান বলেন, ‘দুই পক্ষের সংঘর্ষের পর থেকে আমরা ওই এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রেখেছি। প্রসেনের মৃত্যুর খবর শুনে আসামিরা এলাকাছাড়া। তাঁদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।’