মাদারীপুরে ত্রাণের দাবিতে মহাসড়কে বিক্ষোভ

ত্রাণের দাবিতে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন হতদরিদ্র ব্যক্তিরা। ছবি: প্রথম আলো
ত্রাণের দাবিতে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন হতদরিদ্র ব্যক্তিরা। ছবি: প্রথম আলো

মাদারীপুরে ত্রাণের দাবিতে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন হতদরিদ্র ব্যক্তিরা। আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সদর উপজেলার সমাদ্দার এলাকায় বিক্ষোভের পর মানববন্ধন করেন অন্তত দুই হাজার দিনমজুর নারী-পুরুষ। পরে পুলিশ এসে ত্রাণের আশ্বাস দিলে দেড় ঘণ্টা পর তাঁরা অবরোধ তুলে নেন।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা সদর উপজেলার দত্ত কেন্দুয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা। তাঁদের অভিযোগ, ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) থেকে তিন সপ্তাহ আগে ত্রাণ দেওয়ার কথা বলে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও ছবি নেন পরিষদের কর্মকর্তারা। কিন্তু এখনো কোনো ত্রাণ কিংবা খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়নি নিম্ন আয়ের মানুষদের। বারবার ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে ফিরে আসতে হয়েছে বলেও অভিযোগ তাঁদের।

মহাসড়ক অবরোধ করে তাঁরা সড়কের পাশে মানববন্ধন করেন। ব্যানার-ফেস্টুন হাতে ত্রাণের জন্য রাস্তায় নামেন শিশু-কিশোর, নারীসহ সব বয়সের মানুষ। এ সময় দ্রুত ত্রাণসহায়তা পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন তাঁরা। বিক্ষোভ ও অবরোধের কারণে প্রায় দুই ঘণ্টা ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে।

পুলিশ এসে হ্যান্ড মাইকিং করে ত্রাণের আশ্বাস দিলে অবরোধকারীরা মহাসড়ক থেকে সরে যান। ছবি: প্রথম আলো
পুলিশ এসে হ্যান্ড মাইকিং করে ত্রাণের আশ্বাস দিলে অবরোধকারীরা মহাসড়ক থেকে সরে যান। ছবি: প্রথম আলো

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া পরিবহনশ্রমিক মামুন মৃধা বলেন, ‘আইজ (রোববার) ২৬ দিন হইয়া গেল ঘরে বইসা আছি। কোনো কামকাইজে যাইতে পারি না। সব পরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু আমাদের পেট চলা তো আর বন্ধ নাই। কী কইরা পরিবার বাঁচামু আমরা?’

সজল জোয়ারদার নামের একজন শ্রমিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘পেটের দায়ে আমরা বাধ্য হইয়া রাস্তায় নামছি। ২৪ ঘণ্টার মইধ্যে আমরা কোনো সরকারি খাওনা না পাইলে এই রাস্তা দিয়ে যে কয়টা চাল-ডাইলের গাড়ি যাবে, তা ছিনতাই করা ছাড়া আমাদের হাতে আর কোনো পথ নাই।’

১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রাসেল ফকির বলেন, ‘চেয়ারম্যান বা স্থানীয় এমপি আবদুস সোবহান করোনাকালে ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডে বসবাসকারী একজনকেও কোনো সহায়তা দেয়নি। আমাদের এমপি তো ঢাকায়ই পড়ে থাকেন, আগেও জনগণের প্রতি কোনো সহায়তা ছিল না, এখনো নেই। আর পরিষদে গেলে শুধু জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও ছবি নেয়। কিন্তু ত্রাণ দেওয়ার বেলায় আর কোনো খবর থাকে না।’

দত্ত কেন্দুয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মায়া বেগম বলেন, ‘আমার কেউ নেই, স্বামী মারা গেছে মেলা আগে। পোলারা ঢাকায় থাকে। তারা আমারে দেহে না। কী কইরা বাঁচুম এহন। আগে তো ভিক্ষা কইরা বাঁচতাম। এখন কার কাছে হাত পাতুম আমরা?’

জানতে চাইলে দত্ত কেন্দুয়ার ইউপি চেয়ারম্যান মজিবর রহমানের মুঠোফোনে একাধিক কল ও খুদে বার্তা পাঠিয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) বদরুল আলম মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ত্রাণের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধের কথা শুনেই আমরা দ্রুত সমাদ্দার এলাকায় চলে আসি। এখানে এসে আমরা হ্যান্ড মাইকিং করে তাঁদের ত্রাণ পাওয়ার বিষয়টি আশ্বস্ত করি। ক্ষুব্ধ লোকজন আমাদের অনুরোধ রাখেন। পরে তাঁরা মহাসড়ক থেকে সড়ে দাঁড়ান।’