চট্টগ্রামে ত্রাণের জন্য ঘুরছেন অনেকে, চলছে বিক্ষোভও

চট্টগ্রাম নগরের হিলভিউ আবাসিক এলাকার ৯ নম্বর সড়কের বাসিন্দা নূর মিয়ার মতো অনেকেই ত্রাণ পাননি। আয়ের পথও বন্ধ। পরিবার-পরিজন নিয়ে এখন কীভাবে দিন পার করবেন, তা নিয়ে রয়েছেন দুশ্চিন্তায়। অনেকে ত্রাণের জন্য রাস্তায় নেমেছেন। ত্রাণের দাবিতে বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভও হয়েছে। 

তবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন, পুলিশসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম নগরের বাসিন্দাদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করছে। তারা যে ত্রাণ বিতরণ করছে তা প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত নয়। এর বাইরে অনেকে ত্রাণ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, নগরে এখন বসবাস করে প্রায় ৭০ লাখ মানুষ। সম্প্রতি সিটি করপোরেশন জরিপ করে দেখেছে, তাদের মধ্যে প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ মানুষই দরিদ্র বা সীমিত আয়ের মানুষ। এর বাইরে নিম্ন মধ্যবিত্ত রয়েছে আরও প্রায় আট লাখের মতো। সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের মতে, বর্তমানে এসব মানুষের ত্রাণ প্রয়োজন।
প্রতি পরিবারে গড়ে ৪ জন সদস্য ধরা হলে মোট পরিবার রয়েছে সাড়ে পাঁচ লাখ। কিন্তু সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে খাদ্য সহায়তা পেয়েছে প্রায় এক লাখ পরিবার। বাকি সাড়ে চার লাখ পরিবার খাদ্য সহায়তার বাইরে রয়ে গেছে। তবে সিটি করপোরেশন কাউন্সিলরদের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণের জন্য তালিকা করছে।
সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর কর্মহীন হয়ে খাদ্যসামগ্রীর জন্য মানুষ বিভিন্ন জায়গায় ধরনা দিচ্ছে। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার নির্দেশনা উপেক্ষা করে অনেকে রাস্তায় রাস্তায় ও মোড়ে মোড়ে জড়ো হচ্ছে। প্রতিদিন সন্ধ্যা ও রাতে এই দৃশ্য দেখা যায়। তবে ত্রাণ না পেয়ে গত শনিবার নগরের হালিশহর বড়পোল এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকেরা। এই সময় একটি পিকআপ ভ্যান থেকে খাদ্যসামগ্রী লুট করার অভিযোগও উঠেছে। এর আগে গত বুধবার একই এলাকায় বিক্ষোভ করে বস্তিবাসীরা। ওই দিন নগরের বাকলিয়া এলাকায়ও বিক্ষোভ করেছেন শ্রমজীবী মানুষ। পরদিন বৃহস্পতিবার নগরের কর্নেলহাট এলাকায় ত্রাণের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন বস্তিবাসীরা।
জানতে চাইলে সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, এখন দিনমজুর, শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের মানুষদের পাশাপাশি নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত লোকজনেরও ত্রাণের প্রয়োজন হচ্ছে। তবে মানুষকে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার জন্য সরকার আন্তরিক। যথেষ্ট খাদ্যসামগ্রীও মজুত আছে। কেউ অভুক্ত থাকবে না। মেয়র জানান, নগরের ৪১ ওয়ার্ডে কাউন্সিলরদের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। নগরের গরিব ও অসচ্ছল কর্মহীন পরিবারের তালিকা হালনাগাদ করা হচ্ছে। দুর্যোগ নিরসন না হওয়া পর্যন্ত এসব পরিবারে খাদ্য সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত প্রায় ৭৮ হাজার পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। প্রতি পরিবারকে ৫ কেজি চাল ও ১ কেজি আলু দেওয়া হচ্ছে। মোট ১ লাখ ১৮ হাজার পরিবারকে ত্রাণ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সিটি করপোরেশন। বাকিদের পর্যায়ক্রমে দেওয়া হবে। সরকারিভাবে ৫৯০ টন খাদ্য সহায়তা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৯০ টন বণ্টন করা হয়েছে। কাউন্সিলরদের কাছ থেকে তালিকা পেলে বাকি ৪০০ টন খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হবে বলে জানান কর্মকর্তারা।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম নগর পুলিশ প্রায় ৩০ হাজার পরিবারকে ত্রাণ দিয়েছে। তারা প্রতি পরিবারকে ১৯ কেজি করে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী দিয়েছে।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, তালিকা করে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। প্রতি পরিবারকে অন্তত ১০ দিনের খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়। কেউ কেউ থানায় এসে, ফোন করে খাদ্য সহায়তা চান। তাঁদেরও দেওয়া হচ্ছে। আরও ২০ হাজার মানুষকে ত্রাণ দেওয়া হবে।
নগরের হিলভিউ আবাসিক এলাকার একটি কলোনিতে স্বামী, ছেলেকে নিয়ে থাকেন পোশাকশ্রমিক রত্না সিকদার। স্বামীর কোনো উপার্জন নেই। রত্নার আয়ে চলে সংসার। কিন্তু কারখানা বন্ধ থাকায় কীভাবে সংসার চালাবেন, তা ভেবে পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, ‘ঘরের খাবারের সংকট রয়েছে। ত্রাণের প্রয়োজন। কিন্তু তা পাচ্ছি না।’
বিভিন্ন জায়গায় গিয়েও কোনো খাদ্য সহায়তা পাননি সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক শফিকুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ভাড়াটিয়া। ভোলার ভোটার। আমাদের কে ত্রাণ দেবে? অনেক জায়গায় গেছি। কোনো সহযোগিতা পাইনি। এখন এক দিন খেলে দুদিন না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। ছেলে-মেয়ে নিয়ে খুব কষ্টে আছি।’
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের শুলকবহর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোরশেদ আলম দাবি করেছেন, ত্রাণ দেওয়ার ক্ষেত্রে কে ভোটার, কে ভোটার না, তা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। দিনমজুর, শ্রমিক, প্রতিবন্ধী, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ (হিজড়া), বেদেসহ স্বল্প আয়ের মানুষদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এরপর অন্যদেরও তালিকা করা হচ্ছে ত্রাণ দেওয়ার জন্য।