বঙ্গবন্ধুর আরেক খুনি মোসলেউদ্দিনের গ্রেপ্তারের খবর ভারতীয় গণমাধ্যমে

খুনি রিসালদার মোসলেউদ্দিন
খুনি রিসালদার মোসলেউদ্দিন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আরেক খুনি রিসালদার মোসলেউদ্দিন ভারতে ধরা পড়েছে বলে সে দেশের গণমাধ্যম খবর দিয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, ভারতীয় গোয়েন্দারা এই খুনিকে সীমান্তের কোনো একটি অরক্ষিত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের হাতে তুলে দিয়েছেন। তবে সরকারিভাবে কিছু জানানো হয়নি।

ঢাকায় পুলিশ ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা কেউ বিষয়টি স্বীকার করেনি। তবে পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্র প্রথম আলোকে বলেছে, ‘তাঁকে হাতে পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।’ সূত্রটি আরও বলেছে, এর আগে ধরা পড়া বঙ্গবন্ধুর আরেক খুনি আবদুল মাজেদই রিসালদার মোসলেউদ্দিনের খবর গোয়েন্দাদের জানান। সেই সূত্র ধরেই মোসলেউদ্দিনের খোঁজ হয়। 

ভারতের দৈনিক আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়, গোয়েন্দাদের সহযোগিতায় রিসেলদার (বরখাস্ত) মোসলেউদ্দিনকে উত্তর চব্বিশ পরগনায় একটি গ্রাম থেকে আটক করা হয়। আবার অন্য একটি সূত্রের খবর, মাজেদ আটক হওয়া মাত্রই নিজের মৃত্যুসংবাদ ছড়িয়ে গা-ঢাকা দেন মোসলেউদ্দিন। ভারতের গোয়েন্দাদের একটি সূত্রের অবশ্য দাবি, লকডাউনের সময় এ দেশ থেকে মোসলেউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ায় সমস্যা হতে পারে বলে ঢাকা বিষয়টি ভারতের গোয়েন্দাদের জানায়। ভারতীয় গোয়েন্দারা এই খুনিকে কার্যত তাড়িয়ে সীমান্তের কোনো একটি অরক্ষিত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের হাতে তুলে দেয়। ভারতের গোয়েন্দা সূত্রের খবর, উত্তর ২৪ পরগনার একটি আধাশহরে ইউনানি চিকিৎসক সেজে ভাড়া থাকছিলেন মোসলেউদ্দিন।


১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে হানা দেওয়া দলটির সামনের সারিতে ছিলেন মোসলেউদ্দিন।  ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে এই হত্যা মামলার তদন্ত শুরু করলে মোসলেউদ্দিন দেশ থেকে পালিয়ে যান। তাঁর পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে গা–ঢাকা দেন। মোসলেউদ্দিনের যাবতীয় সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়।


এর আগে বঙ্গবন্ধুর আরেক খুনি আবদুল মাজেদকে ৭ এপ্রিল গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায় পুলিশ। আদালতে দেওয়া পুলিশ প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনি রাজধানীর গাবতলী বাসস্ট্যান্ডের সামনে থেকে রিকশায় করে সন্দেহজনকভাবে যাচ্ছিলেন। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাঁর কথাবার্তা অসংলগ্ন মনে হয়। জিজ্ঞাসাবাদের মুখে তিনি নিজের পরিচয়ের কথা স্বীকার করেন। তবে ভারতীয় গণমাধ্যমে ধারণা, সে দেশের গোয়েন্দারাই তাঁকে আটক করে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেয়। এরপর ১২ এপ্রিল রাত ১২টা ১ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। মাজেদ ২২ থেকে ২৩ বছর ধরে ভারতে অবস্থান করছিলেন। তিনি সে দেশেরই পাসপোর্টও নিয়েছিলেন।


মোসলে উদ্দিন গ্রেপ্তার হওয়ার পর এখন বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার খুনি পলাতক রয়েছেন। তাঁরা হলেন খন্দকার আবদুর রশীদ, শরিফুল হক ডালিম, এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী ও এ এম রাশেদ চৌধুরী। তাঁরা সবাই সাবেক সেনা কর্মকর্তা।


এ ছাড়া খুনিদের মধ্যে ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি রাতে সৈয়দ ফারুক রহমান, বজলুল হুদা, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও মুহিউদ্দিন আহমেদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। ওই রায় কার্যকরের আগেই ২০০২ সালে পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা যান আসামি আজিজ পাশা।