আসুন, করোনাযোদ্ধাদের সম্মান জানাই

রাশেদা কে চৌধূরী
রাশেদা কে চৌধূরী

আমি শুরুতে এক চিকিৎসক মায়ের কথা বলব, যিনি মানুষের সেবা করার জন্য প্রতিদিন বাসা থেকে বের হন। রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে পুরান ঢাকায় অবস্থিত স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে যান। তিনি তাঁর ১০ বছর বয়সী সন্তানকে বাসায় তালাবদ্ধ করে রেখে যান। কারণ, প্রতিবেশী ও আশপাশের মানুষ এখন চিকিৎসক ও তাঁদের পরিবারকে ভিন্ন চোখে দেখছে। কোথাও কোথাও চিকিৎসকদের বাসা ছেড়ে দিতেও বলা হচ্ছে, এমন খবর গণমাধ্যমেও এসেছে।

আজ আমার প্রশ্ন, চিকিৎসকেরা করোনাযুদ্ধের সম্মুখ কাতারের যোদ্ধা, তাঁরা যুদ্ধ করছেন আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে নয়, স্টেথিসকোপ, ভেন্টিলেটর দিয়ে মানুষ বাঁচানোর যুদ্ধ করছেন। কিন্তু সেই যোদ্ধাদের প্রতি আমাদের কেন এই ব্যবহার? ওই চিকিৎসক মা যখন মিটফোর্ডে যান, রিকশাওয়ালাও রিকশায় তুলতে ভয় পান। এ জন্য সাধারণ পোশাকে বের হন, যাতে চিনতে না পারে। আবার হাসপাতালের একটু আগেই রিকশা থেকে নেমে যান। বাকি পথটুকু হেঁটে হাসপাতালে প্রবেশ করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়েও আমরা একে অন্যকে সহায়তা করতে দেখেছি, কিন্তু আজ কেন এই পরিস্থিতি?

 শুধু সম্মুখসমরের যোদ্ধা চিকিৎসকেরাই নন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং গণমাধ্যমকর্মী, যাঁরাই করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছেন, তাঁরা আক্রান্ত হচ্ছেন। তাঁদের জন্য আমাদের অন্তর কতটুকু খোলা রেখেছি, সেই প্রশ্ন আজ রইল।

সরকারি পর্যায়ে যাঁরা আছেন, তাঁদের জন্য বিশেষ ভাতাসহ অনেক কিছুর ব্যবস্থা হচ্ছে। কিন্তু নাগরিক হিসেবে আমরা কতটুকু করছি? অথচ নিজে অসুস্থ হলে সেই চিকিৎসকদের কাছেই যেতে হবে। এ জন্য ঘুরেফিরে বারবার একটি কথা মনে হচ্ছে, আমরা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে কোন ধরনের প্রজন্ম তৈরি করছি? এ জন্য শিক্ষাব্যবস্থারও দায় আছে। বর্তমানে শিক্ষাব্যবস্থা আলোকিত মানুষ তৈরি নয়, যেন শুধু পরীক্ষার্থীই তৈরি করছে। জিপিএ-৫ পাওয়ার দৌড়ে মূল্যবোধে হোঁচট খাচ্ছে।

এখন দেখা যাচ্ছে, সরকার প্রচুর ত্রাণসহায়তা দিচ্ছে, অন্যদিকে আবার চাল চুরির ঘটনাও ঘটছে। করোনাভাইরাসের এই সময়ে গণমাধ্যমকর্মীরা ঝুঁকি নিয়ে আমাদের কাছে সংবাদ পৌঁছে দিচ্ছেন, কিন্তু তাঁদের কি যথাযথ সম্মান দিতে পারছি? এগুলো কি শুধু মূল্যবোধের অবক্ষয়, নাকি দীর্ঘদিন ধরে পরীক্ষানির্ভর শিক্ষাব্যবস্থার ফল? আলোকিত মানুষ তৈরি না করার ফল?

সবশেষে বলব, আসুন, আজকের করোনাযোদ্ধা চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা ও গণমাধ্যমকর্মীদের অন্তত সম্মান জানাই।

লেখক : সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা