আশুলিয়া থেকে হেঁটে নাটোরে...

ঢাকার আশুলিয়া থেকে হেঁটে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার বাড়িতে গেছেন মো. বেনজামিন (২৬)। এখন তিনি উপজেলা সদরের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোয়ারেন্টিনে সময় কাটাচ্ছেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কোনো উপসর্গ না থাকলেও শরীরের ব্যথায় তিনি কাতরাচ্ছেন। তবে এটা এতটা পথ হেঁটে আসার ফল।

বেনজামিন বাগাতিপাড়া পৌরসভার কাউন্সিলর আয়েজ উদ্দিনের ছেলে। বিহারকোল এলাকায় তাদের বাড়ি। তিনি ঢাকার আশুলিয়ায় একটি তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। গত বুধবার পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন। পরে বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

গতকাল মঙ্গলবার মুঠোফোনে বেনজামিন বলেন, কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্তহীনতায় বাড়ি আসার সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হয় তাঁর। গত বুধবার বিকেলে রাস্তায় বের হয়ে দেখেন যানবাহন চলছে না। দুই-একটা ট্রাক চললেও তাতে উঠতে তিন গুণ বেশি ভাড়া লাগছে। নিরুপায় হয়ে তিনি হাঁটা শুরু করেন। ঘণ্টা তিনেক হাঁটার পর পা নড়ছিল না। একটু বিশ্রাম নেওয়ার পর আবার হাঁটা শুরু করেন। এভাবে একটু একটু করে বিরতি দিয়ে পুরো একদিন পর যমুনার তীরে পৌঁছান। নৌকায় করে সিরাজগঞ্জ সীমানায় এসে ভেবেছিলেন, এবার হয়তো গাড়ি পাওয়া যাবে। কিন্তু এখানেও একই অবস্থা। আবার হাঁটা শুরু করেন তিনি। ৩৬ ঘণ্টা পর গত শুক্রবার সকালে পৌঁছান বাড়িতে।

বেনজামিন বলেন, হেঁটে বাড়িতে আসার কথা মুঠোফোনে পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছিলেন। এই খবর স্থানীয় প্রশাসনের কাছেও পৌঁছায়। তাঁকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু অসুস্থ বাবার কথা চিন্তা করে তিনি পরিবারের সদস্যদের পরামর্শে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে শুরু করেন। সারা শরীরে ব্যথায় অস্থির তিনি। ওষুধ খাচ্ছেন। এতে ব্যথা একটু কমলেও ঠিকমতো হাঁটতে পারছেন না তিনি।

কেন এত কষ্ট করে হেঁটে বাড়িতে আসলেন কেন?—জানতে চাইলে বেনজামিন বলেন, লকডাউনে কর্মব্যস্ত আশুলিয়া যেন কেমন হয়ে গেছে। লোকজন নেই বললেই চলে। যারা আছেন, তাঁরাও তেমন একটা কথাবার্তা বলেন না। বাড়ির জন্য মন কাঁদছিল। তাই বাড়ির পথে বের হয়ে পড়েন তিনি। তিনি বলেন, পুলিশের তল্লাশির সময় তাঁর ভয় লাগছিল। ভাবছিলেন, কোথাও আটকে যদি কোয়ারেন্টিনে রেখে দেয়! তবে হেঁটে আসার সময় কেউ তাঁকে কিছু জিজ্ঞেস করেনি। অনেকেই তাঁর মতো হাঁটছিলেন। ফলে কোনো অসুবিধা হয়নি।

বাগাতিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোয়ারেন্টিন পর্যবেক্ষণে থাকা স্বেচ্ছাসেবক মিজানুর রহমান বলেন, বেনজামিনের শরীরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কোনো উপসর্গ নেই।

বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রিয়াংকা দেবী পাল বলেন, 'অনেকের মতো বেনজামিন ঢাকা থেকে ফেরার বিষয়টি লুকানোর চেষ্টা করেননি। তাঁকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হয়েছিল। পরিবারের পরামর্শে তিনি প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন। ১৪ দিন পর্যন্ত সেখানে থাকবেন।;