কটিয়াদীতে ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত সেই জনপ্রতিনিধি

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া জেলা পরিষদ সদস্য মো. কামরুজ্জামান। ফাইল ছবি
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া জেলা পরিষদ সদস্য মো. কামরুজ্জামান। ফাইল ছবি

ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে জেলা পরিষদের এক সদস্য সাময়িকভাবে বরখাস্ত হয়েছেন। স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ মঙ্গলবার এক আদেশে তাঁর বিরুদ্ধে এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কথা জানিয়েছে।

ওই জনপ্রতিনিধির নাম মো. কামরুজ্জামান (৩৪)। তিনি কিশোরগঞ্জ জেলা পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য। কামরুজ্জামান ঢাকার তেজগাঁও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। এর আগে গত শুক্রবার তিনি গ্রেপ্তার হন। ত্রাণের প্যাকেটে পণ্য কম দেওয়া ও বিতরণ কার্যক্রমের সময় নিয়মানুযায়ী উপজেলা প্রশাসনের প্রতিনিধিকে উপস্থিত না রাখার অভিযোগ রয়েছে।

জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতির কারণে জেলা পরিষদ দরিদ্র ও কর্মহীন পরিবারের মধ্যে খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি চালু করেছে। কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে এই কর্মসূচির আওতায় কিশোরগঞ্জ জেলা পরিষদের দেওয়া ত্রাণসামগ্রীর প্যাকেট বিতরণে অনিয়ম ও আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি 'জেলা পরিষদ আইন, ২০০০' অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কার হওয়ার মতো শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

 স্থানীয় লোকজন জানান, কামরুজ্জামান প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদে কটিয়াদী উপজেলা কোটায় সাত নম্বর ওয়ার্ড সদস্য হয়েছেন। ঢাকায় থাকেন। তবে কটিয়াদী উপজেলা আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে পরিচিত।

 জেলা পরিষদ সূত্র জানায়, জেলা পরিষদের খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি নিজ নিজ উপজেলায় পরিষদের সদস্যদের দিয়ে বাস্তবায়ন করানো হচ্ছিল। সে অনুযায়ী, কামরুজ্জামান তাঁর নিজ উপজেলায় ৪৫০টি পরিবারের মাঝে সহায়তার দেওয়ার অর্থ বরাদ্দ পায়। প্রতি প্যাকেটে ১০ কেজি চাল, ১ কেজি ডাল, ১ কেজি তেল, ২টি সাবান ও ২টি মাস্ক থাকার কথা। প্রতি প্যাকেটে ৪৬০ টাকার পণ্য থাকার কথা। আবার কার্যক্রম বাস্তবায়নের সময় ইউএনও অথবা ইউএনও মনোনীত প্রতিনিধিকে উপস্থিত রাখার কথা রয়েছে। কটিয়াদীতে ইউএনও তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে নিযুক্ত করেন। কামরুজ্জামান শুক্রবার বিকালে উপজেলার সহশ্রাম ধূলদিয়া ইউনিয়নের ফুলবাড়িয়া গ্রামে খাদ্য সহায়তা বিতরণ করছিলেন। গ্রামটি তাঁর নিজের। কিন্তু তিনি বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানাননি। এটি জানতে পেরে ইউএনও মোছা. আকতারুন নেছা ঘটনাস্থলে যান। ঘটনাস্থল থেকে ২১৯টি প্যাকেট উদ্ধার করেন। এর মধ্যে ৩২টি প্যাকেটে খাদ্যসামগ্রী ঠিক পান। বাকি ১৮৭টি প্যাকেটে দুই-তিন কেজি করে চাল কম ছিল। অন্যান্য সামগ্রীও প্রয়োজনের তুলনায় কম পাওয়া যায়।

 কামরুজ্জামান কারাগারে থাকায় বক্তব্য জানা যায়নি। তবে গ্রেপ্তার হওয়ার পর পুলিশ হেফাজতে তিনি বলেছিনে, ৪৫০টি প্যাকেটের বরাদ্দ পেলেও পুরো উপজেলায় চাহিদা কয়েকগুণ। ফলে তিনি চেয়েছিলেন পণ্য কম দিয়ে প্যাকেটের সংখ্যা বাড়াতে। বাড়তি কিছু মানুষকে খুশি করতে গিয়ে শেষে তিনি ফেঁসে গেছেন।

কামরুজ্জামানকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। রাতেই প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আব্দুল আলীম ত্রাণ আত্মসাতের অভিযোগ এনে কটিয়াদী থানায় মামলা করেন। পরে তাঁকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কিশোরগঞ্জ কারাগারে পাঠায় পুলিশ।

কামরুজ্জামানকে সাময়িক বহিস্কারের বিষয়ে বিষয়টি বুধবার মুঠোফোনে নিশ্চিত করেছেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জিল্লুর রহমান। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে তাঁকে জানানো হয়েছে, এ সংক্রান্ত ফ্যাক্স বার্তা পাঠানো হয়েছে। তবে এখন কার্যালয় বন্ধ তিনি এখনো হাতে পাননি।

 জিল্লুর রহমান আরও বলেন, 'কামরুজ্জামান ত্রাণ বিতরণ নিয়ে পদে পদে অনিয়ম করেছেন। উপজেলা প্রশাসনকে বিভ্রান্ত করেছেন। আমাকে ভুল তথ্য দিয়েছেন। তাঁর এই কাজে স্বচ্ছতা বলতে কিছুই ছিল না।'