এক সপ্তাহে ফিরেছেন ১১৮৫ প্রবাসী, কোয়ারেন্টিন না মানলে বিপদ

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে এক মাসের বেশি সময় ধরে আকাশপথে চীন ছাড়া অন্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের যাত্রী পরিবহন ফ্লাইট বন্ধ রয়েছে। এ সময়ে ১৮ বিশেষ ফ্লাইটে করে ৩৬৪৯ জন বিদেশি নাগরিক নিজ দেশে গেছেন। আর গত আট দিনে বিভিন্ন দেশ থেকে ১০টি বিশেষ ফ্লাইটে ১১৮৫ জন বাংলাদেশি দেশে এসেছেন। এদের মধ্যে সৌদি আরব ও সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে আসা ৪১৫ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। বাকিরা আছেন হোম কোয়ারেন্টিনে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, আগামীতে বিমান চলাচল স্বাভাবিক না হলে বিশেষ ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়বে। আর এই ধরনের ফ্লাইটে আরো কয়েক হাজার বাংলাদেশি দেশে ফিরবেন। দেশে ফিরে প্রবাসীরা কোয়ারেন্টিনে থাকার নিয়ম না মানলে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়ার আশঙ্কা থেকেই যাবে।

করনোভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে গত ২১ মার্চ থেকে বিশ্বের প্রায় সব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বিমান চলাচল বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের আসায় কয়েক দফা এই নিষেধাজ্ঞা বাড়িয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। তাদের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে। তবে করোনা পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি না হওয়ায় নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা আরো বাড়তে পারে।

কিন্তু নিষেধাজ্ঞা যতই থাকুক না কেন, বিশেষ ফ্লাইটে করে প্রচুর বাংলাদেশি দেশে ফিরছেন। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ভারতের চেন্নাই ও কলকাতা থেকে আটটি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এরই মধ্যে চেন্নাই থেকে তাদের তিনটি ফ্লাইট ঢাকায় এসেছে। এসব ফ্লাইটে ৪৯৭ জন বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন। এদের অধিকাংশই ভারতে চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন। বেসরকারি বিমান সংস্থাটি কলকাতায় আরো দুটি ফ্লাইট পরিচালনা করবে। তবে তাদেরও বিশেষ ফ্লাইটে সংখ্যা বাড়তে পারে। এদিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ভারতের দিল্লিতে একটি বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করবে আগামী ২৪ এপ্রিল।

গতকাল বুধবার ২২ এপ্রিল পর্যন্ত ১০টি বিশেষ ফ্লাইট ঢাকায় এসেছে। এর সবই এসেছে ১৪ এপ্রিলের পর থেকে। এরমধ্যে নেপাল থেকে ১৩ জন, সৌদি আরব থেকে ৩২২ জন, থাইল্যান্ড থেকে ৪৮ জন, চেন্নাই থেকে ৪৯৭ জন, তুরস্ক থেকে ২০ জন, শ্রীলঙ্কা থেকে ৩০ জন, মালদ্বীপ থেকে ৭০ জন এবং সিঙ্গাপুর থেকে ১৮৫ জন বাংলাদেশি। এর মধ্যে সৌদি আরব থেকে আসা ৩২২ জনের মধ্যে ৩০৯ জনকে আশকোনা হজক্যাম্পে প্রতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। একই ফ্লাইটে আসা সৌদি এয়ারলাইনসের ১৩ বাংলাদেশি কেবিন ক্রুকে রাজধানীর উত্তরার একটি আবাসিক হোটেলে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে।

গতকাল সিঙ্গাপুর থেকে আসা ১৮৫ জনের মধ্যে ১০৬ জনকে উত্তরার ব্র্যাক ট্রেনিং সেন্টারে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে।শাহজালাল বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহরিয়ার সাজ্জাদ এই তথ্য জানিয়েছেন।

বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, বিদেশ ফেরতদের মধ্যে যারা মধ্যপ্রাচ্য থেকে দেশে আসছেন, তাঁদের সবাইকে প্রতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হচ্ছে। যাঁরা ভারত বা অন্যদেশে চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন, তাঁদের সেখানকার চিকিৎসা সনদ থাকলে হোম কোয়ারেন্টিনে, আর না থাকলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হচ্ছে। বিদেশি পাসপোর্টধারীদের ক্ষেত্রে তাঁদের দেশের স্বাস্থ্য সনদ থাকা বাধ্যতামূলক। সনদ না থাকলে তাঁদের বিমানবন্দর থেকে সরাসরি নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। গত মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও আফ্রিকার একটি দেশের দুই নাগরিককে ঢাকা থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, বিশেষ ফ্লাইটে ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যসহ কয়েকটি দেশ থেকে কয়েক হাজার বাংলাদেশি আসবেন। এর মধ্যে মাধ্যপ্রাচ্য থেকেই আসবেন তিন হাজার প্রবাসী। আমরা স্বাস্থ্য বিধি অনুযায়ী তাদের কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলছি। যেই আসুক না কেন, বিদেশ ফেরতদের কোয়ারেন্টাইনে থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু যারা হোম কোয়ারান্টাইনে থাকবেন, তাঁরা নিয়ম না মানলে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাবে।

তবে বেবিচক চেয়ারম্যান জানান, যাদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হচ্ছে, তাঁদের তথ্য সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাই নিজেদের এলাকায় তাঁরা নজরদারিতে থাকবেন। আগের মতো ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ কম।