'মহামারিতেও মুনাফার বলি হচ্ছে শ্রমিক'

রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের শ্রদ্ধা জানিয়ে রানা প্লাজা স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের শ্রদ্ধা জানিয়ে রানা প্লাজা স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

আজকের এই দিনে দিনে হুড়মুড় করে ধসে পড়েছিল রানা প্লাজা। নিহত হয়েছিলেন শত শত শ্রমিক। এরপর সময় অনেক পেরিয়ে গেলেও কিছুই বদলায়নি। সাত বছর আগের মতোই শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তার বিষয়টি একই রকম অবহেলিত রয়ে গেছে। আজ শুক্রবার ছিল রানা প্লাজা ধসের সপ্তম বার্ষিকী। এ উপলক্ষে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দেওয়া বক্তব্যে এ কথা বলেন গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের (টিইউসি) সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার।

গার্মেন্ট টিইউসি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন আজ শুক্রবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে রানা প্লাজা ধসে নিহত শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। পরে দেওয়া এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে জলি তালুকদার বলেন, ‘রানা প্লাজার ঘটনা কোনো দুর্ঘটনা নয়, এটা হত্যাকাণ্ড। রানা প্লাজার কয়েক হাজার শ্রমিক মুনাফার শিকার হয়েছেন। যাঁরা বেঁচে আছেন, তাঁরা পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। সাত বছরেও এ ঘটনার বিচার হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘আজও সেই অবস্থা বদলায়নি বিন্দুমাত্র। তাই এই করোনা মহামারিতেও মুনাফার জন্য বলি হচ্ছেন গার্মেন্টস শ্রমিকেরা। এই দুঃসময়ে শ্রমিকদের প্রতি মালিক ও সরকার অন্যায় করছে।’

করোনা প্রতিরোধে গৃহীত পদক্ষেপগুলো মেনে চলার পাশাপাশি নিজেদের দাবি আদায়ের প্রশ্নটিকেও সামনে রাখতে হবে উল্লেখ করে জলি তালুকদার বলেন, ‘সংক্রমণ এড়াতে ঘরে থাকতে হবে। তবুও আজকের এই দিনে কোথাও প্রকাশ্য দাঁড়িয়ে দুটি কথা বলা খুবই জরুরি। শুধু শ্রদ্ধা জানানো কিংবা বিচার, ক্ষতিপূরণ ও নিরাপদ কর্মস্থলের দাবির জন্য নয়। এই মহামারিতে আজ রানা প্লাজা দিবস আরও ভীষণ রকম প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। শুধু গার্মেন্টস শ্রমিক নয়; ব্যক্তি মালিকানা খাতের সব চাকরিজীবী, স্বনিয়োজিত মেহনতি মানুষ, কৃষক, গ্রামের মজুর সবার জন্যই আজকের এই দিন প্রাসঙ্গিক।’ তিনি বলেন, রাষ্ট্রের কাছে আমাদের কারও জীবনেরই কানাকড়ি মূল্য নেই। যে কারণে রানা প্লাজায় হাজার শ্রমিক প্রাণ হারায়, সেই একই কারণে আজ লাখ শ্রমিক মৃত্যু ঝুঁকিতে পড়েছে।’

বক্তব্যে নেতৃবৃন্দ শ্রমিক হত্যার দ্রুত বিচার ও পঙ্গু শ্রমিক ও নিহত শ্রমিকের পরিবারকে সারা জীবনের আয়ের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ প্রদান, বর্তমান পরিস্থিতিতে শ্রমিকের বকেয়া মজুরি পরিশোধ, ছাঁটাই করা শ্রমিকদের পুনর্বহাল, লে-অফ প্রত্যাহারের দাবি জানান।

উল্লেখ্য, স্বাস্থ্যবিধি মেনে আজ রানা প্লাজা স্মৃতিসৌধে সকাল ৮টায় শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র। পুলিশের বাধায় সে কর্মসূচি পালন করা সম্ভব হয়নি। পরে প্রতিবাদের মুখে নিষেধাজ্ঞা কিছুটা শিথিল হলে বেলা ১টায় সিপিবি, গার্মেন্ট টিইউসি, রানা প্লাজা শ্রমিক ইউনিয়ন, উদীচী রানা প্লাজা স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে।