করোনার উপসর্গ নেই আক্রান্ত বেশির ভাগ পুলিশ সদস্যের

করোনায় আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের বেশির ভাগের শরীরে এই রোগের কোনো উপসর্গ দেখা যায়নি। কয়েকজনের সামান্য জ্বর থাকলেও বেশির ভাগই সুস্থ মানুষের মতো। আবার ভর্তির পর ৬–৭ দিনের মধ্যে অনেকে সুস্থ হয়ে গেছেন। রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালের চিকিৎসক ও একাধিক করোনা রোগী এ তথ্য দিয়েছেন।

পুলিশ বাহিনীতে করোনা রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। গত শুক্রবার রাত পর্যন্ত এই বাহিনীতে রোগীর সংখ্যা ছিল ২৬২ জন। আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য পুলিশ হাসপাতালে যাবতীয় ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ ছাড়া রোগ শনাক্তের আগে আইসোলেশনের জন্য ডেমরার অস্থায়ী পুলিশ লাইনস প্রস্তুত করা হয়েছে। সেখানে ১০০টি বিছানা আছে। রাজারবাগ মেহমানখানা এবং মিরপুর মেহমানখানাতেও আইসোলেশনের ব্যবস্থা করেছে পুলিশ। আইইডিসিআরের পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়ার পরই আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের সিপিএইচ বা কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে।

রাজারবাগের কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল সূত্র জানায়, গতকাল পর্যন্ত এই হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত ২১২ জন পুলিশ সদস্য ভর্তি হয়েছেন। এর আগে যারা ভর্তি হয়েছিলেন তাঁদের অনেকেই এখন সুস্থ হয়ে গেছেন। কিন্তু পরীক্ষায় নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়নি, হাসপাতালেই রাখা হচ্ছে।

একাধিক চিকিৎসক প্রথম আলোকে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে মাত্র দুজনকে শ্বাসকষ্টের কারণে অক্সিজেন দিতে হয়েছে। আর কারও অক্সিজেন দেওয়ার প্রয়োজনও পড়েনি। বেশির ভাগের শরীরে কোনো জ্বরই নেই। এরা একেবারে সুস্থ মানুষের মতো।

রাজারবাগের পুলিশ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনায় খুশি করোনা আক্রান্ত পুলিশ সদস্যরা। দুজন পুলিশ সদস্য টেলিফোনে প্রথম আলোকে বললেন, এই হাসপাতালে সব ধরনের ব্যবস্থা আছে। কোনো কিছুর জন্য বাইরে যেতে হয় না। কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের প্রধান ও ডিআইজি হাসান উল হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, করোনা শুরু হওয়ার পরই কারও দিকে না তাকিয়ে পুলিশ হাসপাতাল নিজের মতো প্রস্তুতি নিয়েছে। পর্যাপ্ত অক্সিজেন, আইসিইউ, ভেন্টিলেটরসহ সব ধরনের সুবিধা আগে থেকেই আছে। আছে চিকিৎসক ও কর্মচারীদের জন্য প্রয়োজন মতো মানসম্মত সুরক্ষা সামগ্রী। চিকিৎসা ঠিকমতো হচ্ছে কি না, তাও দেখভালের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রয়েছে। তিনি বলেন, পুলিশ হাসপাতালের চিকিৎসায় কোনো গাফিলতি হলে মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বরত সদস্যের মনোবল ভেঙে যাবে। এসব বিবেচনায় নিয়েই আগাম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল।

করোনা সংক্রমণের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, এই জেলায় ১৩৪ জন পুলিশ সদস্যদের করোনা পরীক্ষা হয়। এতে ১৯ জনের শরীরের করোনা আছে বলে শনাক্ত করা হয়। এই ১৯ জনের মাত্র ৩ জনকে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে পাঠানে হয়। ১১ জন নারায়ণগঞ্জে পুলিশের আইসোলেশন ক্যাম্পে রয়েছে। বাকিরা বাসায় আছেন। আক্রান্ত এই ১৯ জনের কারও শরীরের করোনার কোনো লক্ষণ নেই। এদের কারও জ্বরও নেই।

গোপালগঞ্জের মকসুদপুর থানায় একজন পুলিশ সদস্যদের করোনা শনাক্তের পর থানার সব পুলিশ সদস্যকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়। এরপর ৭৩ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়। এতে দেখা যায় ১৮ জনের শরীরের করোনা ভাইরাস রয়েছে।

গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপার সাইদুর রহমান খান প্রথম আলোকে বলেন, এদের দেখলে বা কথা বললে মনেই হবে না তারা কোনো রোগে আক্রান্ত। তাঁদের শরীরে কোনো ধরনের উপসর্গ নেই। জ্বর-গলাব্যথা কিছুই নেই। ৫–৬ দিন পর পরীক্ষায় সাতজনের ফলাফল নেগেটিভ এসেছে।

চট্টগ্রাম পুলিশ লাইনে এক কনস্টেবলের করোনা ধরা পড়ার পর ৩০০ পুলিশ সদস্যকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়। এরপর মাত্র পাঁচজনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত করা হয়। চট্টগ্রাম মহানগরের পুলিশ কমিশনার মাহবুবর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আক্রান্ত পাঁচ পুলিশকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কিন্তু তাদের কারও কোনো সমস্যা নেই। সবাই ভালো আছেন। বাকিদের শরীরেও কোনো লক্ষণ পাওয়া যায়নি।

ঢাকা বিভাগের ১৩টি জেলায় আক্রান্তদের শরীরেও তেমন উপসর্গ নেই বলে জানালেন ঢাকা রেঞ্জ পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, অনেককে দেখে বোঝার উপায় নেই যে তারা করোনায় আক্রান্ত।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক নাজমুল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, করোনার ভাইরাস বিস্তারের চতুর্থ স্তরে এসে এটা হচ্ছে। উপসর্গ নেই কিন্তু পরীক্ষায় করনা মিলছে। এটা খুবই বিপজ্জনক অবস্থা। কারণ যে মানুষ শরীরের করোনার জীবাণু বহন করছেন তিনি বুঝতেই পারছে না তিনি করোনায় আক্রান্ত। হয়তো শেষ পর্যায়ে গিয়ে বুঝতে পারবেন। তিনি বলেন, এ জন্য দরকার বেশি বেশি পরীক্ষা করা, যাতে দ্রুত করোনা আক্রান্তকে শনাক্ত করে পৃথক করা যায়।