চসিকের রাজস্ব আদায় বন্ধ, বেতন-ভাতা পরিশোধ নিয়ে অনিশ্চয়তা

করোনা ভাইরাসের কারণে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের দীর্ঘদিন ধরে চলা আসা আর্থিক সংকট আরও প্রকট হয়েছে। গত এক মাসে সব ধরনের রাজস্ব আদায় বন্ধ ছিল। ফলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চলতি মাসের বেতন ও ঈদের বোনাস পরিশোধ করা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

নিজস্ব তহবিলে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় বেতন-ভাতার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হতে যাচ্ছেন সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। অর্থ সহায়তা চেয়ে দুই-একদিনের মধ্যে মন্ত্রী ও সচিবকে চিঠি দিতে পারেন বলে জানা গেছে।

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, বর্তমানে স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় সাড়ে নয় হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। তাঁদের মাসিক বেতনই আসে ২০ কোটি টাকার মতো। এর সঙ্গে এবার যুক্ত হয়েছে পবিত্র ঈদুল ফিতরের বোনাস। যার পরিমাণ প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা।
সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা নিজস্ব রাজস্ব আয় থেকে পরিশোধ করতে হয়। সরকার উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ দিলেও এই খাতে কোনো অর্থ দেয় না।
এই পরিস্থিতিতে বেতন-ভাতা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছেন সিটি করপোরেশনের কর্মীরা। অন্তত দশজন প্রথম আলোকে বলেন, এখন রমজান শুরু হয়েছে। সামনে ঈদ। সময়মতো বেতন-বোনাস না পেলে পরিবার নিয়ে অসহায় অবস্থায় পড়ে যাব। কারও কাছ থেকে ধার নেবেন সে পরিস্থিতিও নেই এখন। তাই যে কোনোভাবে নির্ধারিত সময়ে তাঁদের বেতন-ভাতা পরিশোধের আকুতি জানান তাঁরা।
সিটি করপোরেশনের রাজস্ব আয়ের বড় খাত হচ্ছে গৃহকর। এই খাতে প্রতি মাসে গড়ে ১১ কোটি টাকা আয় হয়। এ ছাড়া ভূমি হস্তান্তর, ট্রেড লাইসেন্স, বিভিন্ন স্থাপনার ভাড়া উল্লেখযোগ্য।
সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থ বছরের ১ জুলাই থেকে ২ ৪ মার্চ পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে ২১৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর মধ্যে শুধু মার্চে আয় হয় ১৭ কোটি টাকা। ২৬ মার্চ থেকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর রাজস্ব আদায়ও বন্ধ হয়ে যায়।
চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) গৃহকর আদায় হয়েছে ১০৫ কোটি। আর মার্চে আদায় হয় ৫ কোটি টাকা। গত মাসে ভূমি হস্তান্তর খাতে আয় করেছে ৫ কোটি টাকা। ভূ-সম্পত্তি বিভাগ থেকে এসেছে প্রায় সাত কোটি টাকা। কিন্তু এপ্রিলে এসব খাত থেকে কোনো টাকা আসেনি।
রাজস্ব বিভাগের দায়িত্বশীল কর কর্মকর্তারা জানান, করোনার ভয়ে কর আদায়কারীরা ভবনমালিকদের কাছে যেতে পারেননি। দোকানপাট বন্ধ থাকায় ট্রেড লাইসেন্স ফিও আদায় করা যাচ্ছে না। আর এখন যে পরিস্থিতি মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে যাওয়া যেমন নিরাপদ নয়, তেমনি মানবিকও হবে না। কারণ মানুষ এখন দুর্যোগের মধ্যে রয়েছে।
সিটি করপোরেশনের প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, রাজস্ব আদায় দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দেওয়া হয়। কিন্তু এই মাসে কোনো আয় হয়নি।
সিটি করপোরেশ সূত্র জানায়, গত অর্থ বছরে (২০১৮-১৯) রাজস্ব আদায় হয়েছিল ২৫৭ কোটি টাকা। এবার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪৭৮ কোটি টাকা। কিন্তু ২১৫ কোটি টাকায় এসে আদায় বন্ধ হয়ে গেছে। করোনার কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি কবে নাগাদ স্বাভাবিক হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারাও ধরে নিয়েছেন, অন্তত জুন পর্যন্ত আর কোনো রাজস্ব আদায়ের সম্ভাবনা নেই।
রাজস্ব আদায় না হলে কর্মীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করবেন কীভাবে? জানতে চাইলে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, গত এক মাসে এক পয়সাও আদায় হয়নি। মাস শেষ হতে আর কয়েকটি দিন বাকি আছে। কীভাবে বেতন-ভাতা পরিশোধ করবেন তা নিয়ে চিন্তায় আছেন তিনি। কেননা যা আয় হতো তা বেতন পরিশোধেই চলে যায়।
এই অবস্থায় সরকার ও মন্ত্রণালয়ের সুদৃষ্টি ছাড়া পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তিনি বলেন, অন্তত জুন মাস পর্যন্ত বেতন-ভাতা পরিশোধে থোক বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রীকে চিঠি দেব। আর বিভিন্ন সরকারি সংস্থা যাতে বকেয়া গৃহকর পরিশোধ করে সে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করব।