হাওরের ক্ষুধার্ত মানুষের পাশে তাঁরা

এ পর্যন্ত চার শর বেশি পরিবারকে খাদ্যসহায়তা দিয়েছে করোনাকালে হাওরের ক্ষুধার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াবে মানুষ সংগঠন। ছবি: সংগৃহীত
এ পর্যন্ত চার শর বেশি পরিবারকে খাদ্যসহায়তা দিয়েছে করোনাকালে হাওরের ক্ষুধার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াবে মানুষ সংগঠন। ছবি: সংগৃহীত

শিরোনামটাই সংগঠনটির নাম। সুনামগঞ্জের হাওরের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে তারা। খাদ্যসহায়তা, ধান কাটা, দিনমজুরের কাজ দেওয়া, টেলিমেডিসিনসহ নানানভাবেই এ দুর্যোগে পাশে দাঁড়িয়েছে ‘করোনাকালে হাওরের ক্ষুধার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াবে মানুষ।’

করোনাভাইরাস মহামারিতে ভুগছে সারা বিশ্ব। দেশে–বিদেশে মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। প্রায় এক মাস দেশে সাধারণ ছুটি চলছে, মানুষকে ঘরে থাকতে বলা হচ্ছে। কিন্তু দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষের জন্য এই করোনাভাইরাসের কারণে পাওয়া ছুটি পেটের চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। কাজ নেই, আয়ও নেই। এই অসহায় মানুষকে সাহায্যের জন্য সরকার ছাড়াও নানান সংগঠন ও ব্যক্তিপর্যায়ে মানুষ এগিয়ে এসেছে।
পেশায় ব্যবসায়ী পিনাক রায়ের সঙ্গে দেবাশীষ রায়, ইফতেখার আলম, হেদায়েতুল আনাম ও রাজীব দাস মিলে শুরু করেন করোনাকালে হাওরের ক্ষুধার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াবে মানুষ সংগঠন। কেউ চাকরি করেন, কেউ বিদেশে পড়াশোনা করছেন। কিন্তু তাঁরা সবাই সুনামগঞ্জের সন্তান। তাই নিজ জেলার হাওরাঞ্চলের মানুষের জন্য কিছু করতে একযোগে নিজেদের সাধ্যমতো কাজ করছেন।
পিনাক রায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই ও শাল্লা উপজেলায় এপ্রিলের ২ তারিখ থেকে আমরা কাজ শুরু করি। এ পর্যন্ত ৪০৪টি পরিবারকে খাদ্যসহায়তা দিয়েছি। এ সহায়তা কার্যক্রম এখনো চলমান।’ তিনি জানান, হাওরাঞ্চলে অনেক জেলে, কৃষক, বর্গাচাষি, শ্রমিক, দারিদ্র্যসীমার নিচে যাঁরা বাস করেন, তাঁদের জন্যই কিছু করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকেরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছেন। ছবি: সংগৃহীত
স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকেরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছেন। ছবি: সংগৃহীত

এ সময়টা ধান কাটার মৌসুম। হাওরে অনেক বর্গাচাষি রয়েছেন, যাঁরা শ্রমিক ও মজুরির অভাবে ধান কাটতে পারছেন না। তাঁদের জন্য পিনাকদের সংগঠন কাজ করছে। তিনি জানান, ‘বৃহস্পতিবার থেকে হাওরে ধান কাটার কার্যক্রম শুরু করেছি। হাওরে প্রচুর কর্মহীন শ্রমিক আছেন, যাঁরা হয়তো অন্য কোনো কাজ করতেন। আবার বর্গাচাষি যাঁরা আছেন, যাঁরা ধান ফলিয়েছেন কিন্তু কাটানোর মতো টাকা নেই। আমরা সেখানে ওই শ্রমিকদের মজুরি দিয়ে ওই সব বর্গাচাষির ধান কাটতে পাঠাচ্ছি। আজকে পর্যন্ত ১৪০ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে। আবার ওই বর্গাচাষিকে বলছি যে আপনার ধানের ন্যায্যমূল্য পেতে সরাসরি বিক্রি করতেও সহযোগিতা করব।’ ধান কাটার ক্ষেত্রে তাঁরা হাওরের স্থানীয় শ্রমিককে কাজে লাগাচ্ছেন, যাতে এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে যেন করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ভয় না থাকে।
জরুরি প্রয়োজনে পাঁচজন চিকিৎসকের সমন্বয়ে টেলিমেডিসিন সেবাও দিচ্ছে করোনাকালে হাওরের ক্ষুধার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াবে মানুষ। রোজা সামনে রেখে রোজার প্যাকেজ শুরু করতে যাচ্ছে, যেখানে আরও ৪০০ পরিবারকে সহায়তার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া বাইরে থেকে হাওরে এসে যেসব শ্রমিক ধান কাটছেন, তাঁদের স্যালাইন, বিস্কুট দিচ্ছেন তাঁরা।
পিনাক ঢাকা থেকে সমন্বয় করছেন আর ইফতেখার আলম সুনামগঞ্জে থেকে কার্যক্রমটি পরিচালনা করছেন। পেশায় আইনজীবী ইফতেখার প্রথম আলোকে বলেন, ‘খাদ্যসহায়তা দিচ্ছি। এখন ধান কাটায় সহায়তা করছি। বড় কিছু হয়নি, তবে আমরা চেষ্টা করছি।’
করোনাকালে হাওরের ক্ষুধার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াবে মানুষ সংগঠনটিতে প্রায় ৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন। পিনাক রায় বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন গ্রামে স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করেছি। স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে স্থানীয় শিক্ষার্থী যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা দরিদ্র মানুষগুলোকে খুঁজে পেতে সাহায্য করেন এবং সাহায্য পৌঁছে দেন।’
পিনাকরা নিজেদের পরিচিতজনদের থেকে পাওয়া অর্থসহায়তা দিয়েই সংগঠনের কাজ চালাচ্ছেন। ফেসবুকে ‘করোনাকালে হাওরের ক্ষুধার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াবে মানুষ’ নামে একটি গ্রুপ আছে, যেখানে যোগাযোগ করে অনেকে সহায়তা করছেন। তবে পিনাক বলেন, ‘পরিচিতজনদের ফান্ডেই চালিয়ে যাচ্ছি। আরও বড় আকারে যেতে হলে আরও বেশি সহযোগিতা দরকার।’