কিশোরগঞ্জে করোনা আক্রান্তদের বেশির ভাগই চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের পরেই সবচেয়ে বেশি করোনা সংক্রমণ এখন কিশোরগঞ্জ জেলায়। গত শনিবার পর্যন্ত এই জেলায় মোট করোনা রোগীর সংখ্যা ছিল ১৭৫। মারা গেছেন ৩ জন। আক্রান্তদের বেশির ভাগই চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী।

চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেকেই তথ্য গোপন করে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাওয়ায় এ জেলায় অধিকসংখ্যক স্বাস্থ্যকর্মী সংক্রমিত হয়েছেন। গত শনিবার পর্যন্ত ৪৭ চিকিৎসকসহ ১০৫ জন স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হওয়ায় উদ্বেগ বেড়েছে। গতকাল রোববারের সংক্রমণের হিসাব পাওয়া যায়নি।

তবে গত বৃহস্পতিবার থেকে সংক্রমণের হার কম বলে জানা গেছে। বৃহস্পতিবার আক্রান্তের সংখ্যা ৮, শুক্রবার ১ এবং শনিবার ২৪ জনের নমুনা পরীক্ষার পর কোনো সংক্রমণ পাওয়া যায়নি। আক্রান্তদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়াও স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ৯ জন পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন। এই জেলাকে লকডাউন (অবরুদ্ধ) ঘোষণার পর জেলা প্রশাসন থেকে কড়াকড়ি নির্দেশনা দিয়ে ১০ এপ্রিল থেকে জরুরি গণবিজ্ঞপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে।

১৩ উপজেলা নিয়ে গঠিত এ জেলায় প্রায় ৩৫ লাখ মানুষের বসবাস। এদের একটি বড় অংশ ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানায় কাজ করে। দেশে করোনায় আক্রান্তের শুরু থেকে প্রশাসনের বাধা সত্ত্বেও এখনো অনেক লোক গোপনে রাতের আঁধারে ও ভোরে কর্মস্থল থেকে বাড়িতে ফিরছেন। তাঁদের মাধ্যমে এলাকায় করোনার সংক্রমণের বিস্তার হচ্ছে বলে স্থানীয়দের ধারণা।

তা ছাড়া অনেকের করোনা উপসর্গ থাকলেও তা গোপন করে অন্য রোগের চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে যাওয়ায় স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জনসংখ্যার অনুপাতে এখানে এমনিতেই চিকিৎসা ব্যবস্থা ভালো নয়। এখন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর জেলা সদরের যশোদল এলাকায় অবস্থিত শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের ৫০০ শয্যা হাসপাতালকে করোনা–আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

এই হাসপাতালের পরিচালক সৈয়দ মো. মঞ্জুরুল হক জানান, তাঁদের হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে এক করোনা রোগী গতকাল বাড়ি ফিরে গেছেন। ইটনার এই বাসিন্দা এখানে ৯ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। ইটনায় তিনি ছাড়াও ১০ জন সংক্রমিত রোগী রয়েছেন। এ জেলায় এটাই প্রথম কোনো করোনা রোগীর সুস্থ হওয়ার খবর।

মঞ্জুরুল হক আরও জানান, তাঁদের ৫০০ শয্যা হাসপাতালে ২০০ শয্যা করোনা রোগীদের জন্য প্রস্তুত রাখা আছে। বর্তমানে ২৮ জন রোগী আছেন। রোগীর তুলনায় চিকিৎসক রয়েছেন পর্যাপ্ত। তবে এন৯৫ মাস্ক পাননি তাঁরা। অনেকেই নিজ উদ্যোগে মাস্ক সংগ্রহ করেছেন। পিপিই ও মাস্কের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। তবে এ হাসপাতালে দক্ষ লোকবলের সংকটের কারণে দুটি ভেন্টিলেটর থাকা সত্ত্বেও চালু করা যায়নি। একই কারণে আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) চালু করা সম্ভব হয়নি। এসব চালু করার কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে তিনি জানান।

কিশোরগঞ্জের ডেপুটি সিভিল সার্জন মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আক্রান্তদের মধ্যে দুজন ঢাকায় কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসাপাতালে, তিনজন কুর্মিটোলা হাসপাতালে, একজন ময়মনসিংহের এসকে হাসপাতালে ও ২৮ জন সদরের সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছেন। বাকি ১৪১ জন রোগী নিজ নিজ বাড়িতে চিকিৎসাধীন আছেন। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে তাঁদের নিয়মিত খোঁজ রাখা হচ্ছে। কারও অবস্থা খারাপ হলে হাসপাতালে নিয়ে আসা হবে।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বেশি সংখ্যক স্বাস্থ্যকর্মী সংক্রমিত হওয়ায় স্বাস্থ্যসেবা কিছুটা ব্যাহত হলেও তাঁরা রোগীদের সেবাদানে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। চিকিৎসকসহ অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হওয়ায় জেলার করিমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। একই কারণে তাড়াইল, ইটনা, মিঠামইন ও ভৈরব হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা আংশিক চালু আছে।

মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব

জেলা প্রশাসনের কড়াকড়ি নির্দেশনা জারি করে জরুরি গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরও মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব। বাইরে থেকে বিশেষ করে দেশের করোনা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে রাতের আঁধারে গোপনে এ জেলায় অসংখ্য লোক আসছে।

জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, দেশে আক্রান্ত তালিকা অনুযায়ী কিশোরগঞ্জ ৪ নম্বরে অবস্থান করছে। সে জন্য জেলায় মাস্কবিহীন কাউকে পাওয়া গেলে অর্থদণ্ড করা হবে। পাশাপাশি রোজায় যত্রতত্র ইফতারি বেচাকেনা বা ইফতারির পসরা সাজিয়ে বসা যাবে না। তারাবিহর নামাজে প্রতিটি মসজিদে ইমামসহ সর্বোচ্চ ১২ জন নামাজ পড়তে পারবেন। সন্ধ্যা ছয়টার পর কেউ ঘর থেকে বের হতে পারবেন না।

করোনা মোকাবিলায় শহরের কাঁচাবাজারগুলো বিভিন্ন স্কুলের খোলা মাঠে স্থানান্তর করা হয়েছে। জনস্বার্থে এসব নির্দেশনা পালন করার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে।