উপকূলের মানুষজনের বিপদের বন্ধু হাফিজুর

মো. হাফিজুর রহমান।  ছবি: প্রথম আলো
মো. হাফিজুর রহমান। ছবি: প্রথম আলো

নমুনা সংগ্রহ করতে এলাকার একটি বড় প্রতিষ্ঠানে গেলেন হাফিজুর রহমান। নমুনা সংগ্রহ শেষে নিজ হাতে রোগীর তথ্য ফরম পূরণ করলেন। ফরমে ওই প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসা কর্মকর্তার সই চাইলেন। তাতে নারাজ ওই কর্মকর্তা। কারণ তিনি যে হাতে রোগীর কাছ থেকে নমুনা নিয়েছেন, সেই হাতে ফরম পূরণ করেছেন।

এমন নানা প্রতিকূলতা নিয়ে উপকূলের উপজেলা পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় কাজ করছেন হাফিজুর রহমান। তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাবরেটরি)। এলাকায় পরিচিতি পেয়েছেন উপকূলের মানুষজনের ‘বিপদের বন্ধু’ হিসেবে। কারণ একটাই, উপজেলায় একমাত্র তিনিই করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করছেন। কখনো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা লোকজনের কাছ থেকে, কখনো বাড়ি বাড়ি গিয়ে। কারও দেহে করোনার উপসর্গ আছে, এমন খবর পেলেই ছুটে যাচ্ছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা চিন্ময় হাওলাদার বলেন, ‘হাফিজুর পরিবারকে ফেলে রেখে, ঝুঁকি রয়েছে তা জেনেও একটানা কাজ করছেন। উপকূলের মানুষজন যেমন তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ, তেমনি আমরাও কৃতজ্ঞ।’

 গত মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের বিস্তার শুরু হয়। কলাপাড়ায় রোগীদের নমুনা সংগ্রহের জন্য স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন চিকিৎসক ও ছয়জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট প্রশিক্ষণ নেন। ওই ছয়জনের একজন হাফিজুর।

হাফিজুর রহমান বলেন, ‘স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শ্বাসকষ্ট, হাঁচি-কাশি, সর্দি-জ্বর নিয়ে অনেকে আসেন। তাঁদের নমুনা সংগ্রহ করতে হয়। এমন উপসর্গের খবর পেলে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ছুটে যাই। নিজেই মোটরসাইকেল ভাড়া করি। এ পর্যন্ত ৩৭ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছি। তবে হতাশার কথা হলো, প্রশিক্ষণ নেওয়া কোনো সহকর্মীকে পাশে পাই না। এ কাজ করতে গিয়ে আমিও তো করোনায় আক্রান্ত হতে পারি।’ শুধু তা–ই নয়, নমুনা সংগ্রহ করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফিরলে সহকর্মীরাও তাঁকে এড়িয়ে চলেন বলে জানালেন হাফিজুর।

হাফিজুর রহমানের স্ত্রী রেহেনা আক্তার বলেন, ‘হাফিজুর বাড়িতে আমাদের থেকে আলাদা থাকছেন। আমি এবং আমার সন্তানেরা তাঁকে নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে থাকি। তবে তিনি মানবসেবা করছেন, এটাই আমাদের বড় শান্তি।’