যুক্তরাজ্যে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে বললেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। ফাইল ছবি
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। ফাইল ছবি

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সাগরে ভাসা শ'পাঁচেক রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিতে যুক্তরাজ্যের অনুরোধে রাজি হননি। তিনি রোহিঙ্গাদের উদ্ধার করে যুক্তরাজ্যে আশ্রয় দিতে দেশটির রাজকীয় নৌবাহিনীর জাহাজ পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছেন।

আজ মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া ও কমনওয়েলথ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী লর্ড আহমেদের সঙ্গে ফোনালাপে তিনি এই অভিমত দেন। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সাগরে ভাসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ জানালে তিনি পাল্টা যুক্তরাজ্যকেই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে বলেন।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর টেলিফোনে আলাপের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সব দেশকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহবান জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

করোনাভাইরাসকে পুঁজি করে মানবপাচারকারীরা শ'পাঁচেক রোহিঙ্গাকে মালয়েশিয়ায় পাঠানোর চেষ্টায় সপ্তাহ দুয়েক আগে ট্রলারে করে সাগর পাড়ি দেয়। কিন্তু মালয়েশিয়ায় প্রবেশে ব্যর্থ হয়ে রোহিঙ্গাবোঝাই নৌকা এখন সাগরে ভাসছে। বাংলাদেশ এরই মধ্যে জানিয়েছে রোহিঙ্গাবোঝাই ট্রলার এই মুহূর্তে বাংলাদেশের জলসীমায় নেই। কাজেই তাদের গ্রহণের বাধ্যবাধকতা নেই বাংলাদেশের। যদিও জাতিসংঘ ও পশ্চিমা দেশগুলো রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে বাংলাদেশকে নানান স্তরে চাপ দিয়ে যাচ্ছে।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে টেলিফোনে এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ এবং সীমিত সম্পদ থাকার পরও মানবিকতার পরিচয় দিয়ে এরই মধ্যে ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। ৫০০ রোহিঙ্গা সে তুলনায় অতি সামান্য। তারা এখন বাংলাদেশ সীমানায় নেই। মানবিক কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে অনুরোধ করা হলেও এই এলাকার অন্যান্য দেশকে আশ্রয় দিতে বলা হয়নি। যুক্তরাজ্যের রয়েল জাহাজ এসেও তাদের উদ্ধার করে আশ্রয় দিতে পারে বলে যুক্তরাজ্যের প্রতিমন্ত্রীকে জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

এ কে আব্দুল মোমেনের মতে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের উচিত বাংলাদেশে অবস্থানরত ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে তাদের দেশে নিয়ে গিয়ে আশ্রয় দেওয়া। তিনি বলেন, বর্তমানে বিশ্বের অন্যান্য দেশের, বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোর উচিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানে এগিয়ে আসা। এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশের ওপরও রোহিঙ্গাদের আশ্রয় প্রদানের দায়িত্ব বর্তায়। মিয়ানমারে এখনও সামরিক অভিযান চলছে এবং রোহিঙ্গারা মারা যাচ্ছে। কিছুদিন আগেও তারা বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করেছে। অবশিষ্ট রোহিঙ্গারা আবারও বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করতে পারে। তারপরও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশ মিয়ানমারে বিনিয়োগ করছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোও এ নিয়ে সোচ্চার নয়।

য্ক্তুরাজ্যের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে টেলিফোনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অনেক লোক মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে চাকরি হারিয়ে খাবারের অভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে তিনি যুক্তরাজ্যের প্রতিমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান। আব্দুল মোমেন বলেন, মানবিক কারণে যুক্তরাজ্যসহ উন্নত বিশ্বের বাংলাদেশের নাগরিকদের চাকরিতে বহাল রাখার বিষয়ে সোচ্চার হওয়া উচিত।

যুক্তরাজ্যের ক্রেতারা যাতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ বাতিল না করেন সে বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাজ্যের সহযোগিতা চান। তিনি বলেন, ক্রয়াদেশ বাতিল হওয়ায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত সমস্যায় পড়েছে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে ক্রয়াদেশ বজায় রাখার জন্য যুক্তরাজ্যকে বিশেষ তহবিল গঠনের অনুরোধ করেন।

বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যকে করোনা প্রতিরোধে উপহার হিসেবে চিকিৎসা সামগ্রী পাঠাবে বলে লর্ড আহমেদকে জানান আব্দুল মোমেন। এর জবাবে যুক্তরাজ্যের প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।