কৃষকের ধান কেটে দিলেন উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা

কৃষকের পাকা ধান কেটে দিচ্ছেন উপজেলার সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা। মঙ্গলবার সকালে নোয়াখালীর সেনবাগ পৌরসভার উত্তর সাহাপুর এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো
কৃষকের পাকা ধান কেটে দিচ্ছেন উপজেলার সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা। মঙ্গলবার সকালে নোয়াখালীর সেনবাগ পৌরসভার উত্তর সাহাপুর এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল আটটা। রমজান মাস, সেই সঙ্গে করোনার সংক্রমণ মোকাবিলায় চলছে লকডাউন। চারদিক ফাঁকা। এ সময় একটি পাকা ধানের খেতে হাজির টি-শার্ট ও প্যান্ট পরা একদল মানুষ। তাঁরা আর কেউ নন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা। তাঁরা একসঙ্গে মাঠে নেমে বর্গাচাষি জহিরুল ইসলামের ৩৬ শতাংশ জমির বোরো ধান কেটে দিলেন।

ঘটনাটি আজ মঙ্গলবার সকালে নোয়াখালীর সেনবাগ পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর সাহাপুর এলাকার। সরকারি কর্মকর্তাদের এমন সহমর্মিতায় আবেগাপ্লুত জহিরুল ইসলামও। যেখানে শ্রমিকের অভাবে তিনি খেতের পাকা ধান কাটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছিলেন, সেখানে ঘণ্টাখানেকের মধ্যে খেতের সব ধান কাটা হয়ে গেল।

জহিরুল ইসলাম বলেন, মাঠের প্রায় খেতের ধানই পেকে গেছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে বাইরের জেলা থেকে শ্রমিক আসা বন্ধ। এ কারণে এলাকায় শ্রমিকের তীব্র সংকট। টাকার অভাবে খুব দুশ্চিন্তায় ছিলেন খেতের ধান কাটা নিয়ে। তবে ভাবতেও পারেননি সরকারি কর্মকর্তারা এভাবে এসে তাঁর খেতের ধান কেটে দেবেন। তাঁদের এই মহানুভবতায় মজুরির প্রায় সাত হাজার টাকা ঋণ করা থেকে রক্ষা পেয়েছেন।

উপজেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগে সরকারি ১০টি দপ্তরের কর্মকর্তারা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কৃষকের খেতের ধান কেটে দেওয়ার এই কাজে যুক্ত ছিলেন। তাঁরা হলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম মজুমদার, উপজেলা প্রকৌশলী দিবাকর কর্মকার, কৃষি কর্মকর্তা জুনায়েদ আহম্মদ, সহকারী কৃষি কর্মকর্তা গোলাম আযম, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাজিম উদ্দিন, প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আরিফ হোসেন, সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. নাসরুল্লাহ আল-মাহমুদ, পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা মো. সফি উল্লাহ, পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।

ইউএনও মো. সাইফুল ইসলাম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে সরকারি অফিস সময় শুরুর আগে তিনি উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে অসহায় কৃষকের ধান কেটে দিয়েছেন, যিনি টাকা ও শ্রমিকের অভাবে খেতের ধান কেটে ঘরে তুলতে পারছিলেন না। তিনি আরও বলেন, সময়-সুযোগ পেলে এ ধরনের কর্মকাণ্ড তাঁরা অব্যাহত রাখবেন। এখন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া অনেক শিক্ষার্থী গ্রামে অবস্থান করছেন। তাঁরা ইচ্ছা করলে অসহায় কৃষকের খেতের ধান কেটে দিতে পারেন। এতে সমাজে একে অপরের প্রতি সহমর্মিতা যেমন প্রতিষ্ঠিত হবে, তেমনি কৃষকেরা কৃষি উৎপাদনে আরও বেশি আগ্রহী হবেন।