স্বাস্থ্য সনদ ছাড়াই আরব আমিরাত থেকে এলেন ১৮৮ শ্রমিক

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে সোমবার দিবাগত রাতে ঢাকায় এসেছেন ১৮৮ বাংলাদেশি শ্রমিক। তবে দেশে ফেরার সময় স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ ছাড়াই এসব শ্রমিককে ফ্লাই দুবাইয়ের বিশেষ ফ্লাইটে তুলে দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য সনদ না থাকায় এসব শ্রমিককে আশকোনায় ব্র্যাক ট্রেনিং সেন্টারে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে।

সূত্র জানায়, সোমবার ফিরে আসা ১৮৮ শ্রমিক আরব আমিরাতের বিভিন্ন কারাগারে বন্দী ছিলেন। এদের অনেকের ওয়ার্ক পারমিট ছিল না, কারও ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে, আবার কারও পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। এসব কারণে তাঁরা কারাবন্দী ছিলেন। তবে করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ায় ছোটখাটো অপরাধে প্রবাসী কারাবন্দীদের মুক্তি দিয়ে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে আরব আমিরাত। কিন্তু সোমবার রাতে ফেরত পাঠানো ১৮৮ শ্রমিকের কারও সঙ্গে করোনাভাইরাস পরীক্ষাসহ স্বাস্থ্য সনদ ছিল না।

এ কারণে ফেরত আসাদের হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে সরাসরি প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহারিয়ার সাজ্জাদ প্রথম আলোকে বলেন, আরব আমিরত থেকে ১৮৮জন শ্রমিককে নিয়ে বিশেষ ফ্লাইটটি সোমবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ঢাকায় আসার কথা ছিল। কিন্তু সেই ফ্লাইটটি প্রায় আট ঘণ্টা পর ঢাকায় আসে। এর কারণ জানা যায়নি। নিয়ম অনুযায়ী বিদেশফেরত সবার করোনাভাইরাসসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ থাকতে হবে। স্বাস্থ্য সনদ থাকলে হোম কোয়ারেন্টিনে এবং সনদ না থাকলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হবে। আমিরাত থেকে আসা ১৮৮ জনের মধ্যে কারও কাছেই স্বাস্থ্য সনদ ছিল না। তাই তাঁদের সবাইকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে।

গত ২১ মার্চ থেকে চীন ছাড়া বিশ্বের সব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের যাত্রীবাহী ফ্লাইট বন্ধ রয়েছে। তবে ১৪ এপ্রিল থেকে গতকাল ২৮ এপ্রিল বিকেল পর্যন্ত ১৮টি বিশেষ ফ্লাইটে করে বিভিন্ন দেশ থেকে ২৩৫৯ বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন। এদের মধ্যে ভারত ও মধ্যপ্রাচ্য থেকেই বেশি এসেছেন। ভারত থেকে যাঁরা ফিরেছেন, তাঁদের বড় অংশ চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্য থেকে যাঁরা এসেছেন, তাঁরা প্রায় সবাই কারাবন্দী শ্রমিক ছিলেন। এর মধ্যে ১৫ এপ্রিল সৌদি আরব থেকে বিশেষ ফ্লাইটে ফিরে আসা ৩০৯ জন বাংলাদেশির কাছে স্বাস্থ্য সনদ না থাকায় তাদের আশকোনায় হজ ক্যাম্পে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়। এই ৩০৯ বাংলাদেশির মধ্যে বড় একটি অংশ সৌদি আরবে কারাবন্দী ছিলেন। একই কারণে গত ২২ এপ্রিল সিঙ্গাপুর থেকে আসা ১৮৫ জন বাংলাদেশির মধ্যে ১০৬ জন শ্রমিককেও আশকোনায় ব্র্যাক ট্রেনিং সেন্টারে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়।

এ ছাড়া নেপাল থেকে আসা ১১ বাংলাদেশিকেও স্বাস্থ্য সনদ না থাকায় হজ ক্যাম্পে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে ৬১৪ জন বিদেশ ফেরত শ্রমিক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছিল। কোয়ারেন্টিনে ১৪ দিন থাকার পর ১১জন আজ মঙ্গলবার সকালে হজ ক্যাম্প থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। সৌদি আরব থেকে আসা ৩০৯ জনের কারও শরীরে এখনো পর্যন্ত করোনার উপসর্গ পাওয়া যায়নি। সব ঠিক থাকলে কাল বুধবার সকালে তাঁরা কোয়ারেন্টিনের মেয়াদ শেষে ছাড়পত্র পাবেন।
বিশেষ ফ্লাইটে ফিরে আসা বাংলাদেশিদের মধ্যে ওমান থেকে ২৯১ জন, বাহরাইন থেকে ১৩৮ জন এবং কুয়েত থেকে ২৪৭ জন সবাই কারাবন্দী শ্রমিক ছিলেন। তবে স্বাস্থ্য সনদ থাকায় এদের হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।