বরিশালে চিকিৎসকের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় হত্যা মামলা

বরিশাল মে‌ডিকেলের বার্ন ও প্লা‌স্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান এম এ আজাদ। ছবি: সংগৃহীত
বরিশাল মে‌ডিকেলের বার্ন ও প্লা‌স্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান এম এ আজাদ। ছবি: সংগৃহীত

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান এম এ আজাদকে (৪৫) পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে মনে করছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। এ ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার রাতে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় পরিবারের পক্ষ থেকে অজ্ঞাত আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

গতকাল রাতে মামলা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরিশাল মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার মো. রাসেল। তিনি বলেন, নিহত এম এ আজাদের ছোট ভাই চিকিৎসক শাহরিয়ার উচ্ছ্বাস মামলাটি করেন। তবে মামলায় আসামি হিসেবে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। এই মৃত্যুর রহস্য উদ্‌ঘাটনে পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে। কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

গত সোমবার নিখোঁজ হওয়ার পর গতকাল সকালে নগরের কালীবাড়ি রোডের বেসরকারি মমতা স্পেশালাইজড হাসপাতালের লিফটের নিচ থেকে চিকিৎসক এম এ আজাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। তাঁর মৃত্যু এবং লাশ লিফটের নিচে পাওয়া নিয়ে নানা ধরনের সন্দেহ ঘনীভূত হচ্ছে।

লাশ উদ্ধারের পর দুপুরে এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই বেসরকারি হাসপাতালে নয় কর্মচারীকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এম এ আজাদের মরদেহ ময়নাতদন্তের পর শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মসজিদে জানাজা শেষে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

পুলিশের একজন কর্মকর্তা এবং একাধিক গোয়েন্দা শাখার সূত্র প্রথম আলোকে বলেন, লিফট থেকে পড়ে গিয়ে এমন ঘটনা ঘটার কথা নয়। এটি স্বাভাবিক কোনো দুর্ঘটনা বলেও মনে হচ্ছে না। এ ছাড়া মরদেহে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এটি হত্যা, নাকি দুর্ঘটনা, এখনই নিশ্চিতভাবে কিছু বলা সম্ভব নয়। সূত্রটি বলছে, সোমবার ইফতারের আগে স্বজনদের সঙ্গে চিকিৎসকের সর্বশেষ যোগাযোগ হয়। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। তার মুঠোফোনসহ ব্যবহৃত ব্যক্তিগত সামগ্রী সবকিছুই রুমের মধ্যে ছিল। কোনো কিছু চুরিও হয়নি।

চিকিৎসকদের একটি সূত্র বলে, যেহেতু লিফটটি সচল আছে, সেখানে কীভাবে সচল লিফটের নিচে তিনি পড়ে গেলেন, এখন এটা এক বড় প্রশ্ন। এই প্রশ্নের জবাব না মেলা পর্যন্ত রহস্য থেকেই যাবে। পুলিশ বিষয়টি যথাযথভাবে তদন্ত করলে আজাদের মৃত্যুর আসল রহস্য উদ্‌ঘাটিত হবে।

কয়েকজন সহকর্মী প্রথম আলোকে বলেন, এম এ আজাদ ওই হাসপাতালের সপ্তম তলায় একাই বসবাস করতেন। তাঁর পরিবার ঢাকায় থাকেন। তাঁকে খাবার সরবরাহ করেন তাঁর এক সহকারী। সোমবার সন্ধ্যায় ইফতারি দিতে এসে তাঁর কক্ষে তালা দেখতে পান ওই সহকারী। তিনি বাইরে গেছেন মনে করে দরজার সঙ্গে ইফতারি ঝুলিয়ে রেখে যান। এরপর রাত নয়টার দিকে রাতের খাবার দিতে এসে সহকারী একই অবস্থা দেখেন। রাতের খাবারও দরজার সামনে রেখে যান। সাহ্‌রির এম এ আজাদের স্ত্রী ঢাকা থেকে মুঠোফোনে বারবার কল দিয়েও তাঁকে পাচ্ছিলেন না। পরে তাঁর স্ত্রী বিষয়টি বরিশাল মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক জহুরুল হককে ফোন করে জানান। অধ্যাপক জহুরুল গতকাল সকাল ৬টার দিকে ওই হাসপাতালের সাততলায় গিয়ে দেখেন, চিকিৎসক আজাদের কক্ষটি তালাবদ্ধ। এরপর তিনি বরিশালের কোতোয়ালি থানায় ফোন করেন। সকাল সাড়ে আটটার দিকে পুলিশ গিয়ে কক্ষের তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে দেখে মুঠোফোন বিছানার ওপর রাখা। পরে পুলিশ পুরো হাসপাতাল তল্লাশি করে। একপর্যায়ে নিচতলায় লিফটের নিচে তাঁর মৃতদেহ পাওয়া যায়। তাঁর পরনে নীল রঙের একটি ট্রাউজার এবং গায়ে ফুলহাতার একটি গেঞ্জি ছিল।

শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মো. বাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, চিকিৎসক আজাদের মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে এখনই তাঁরা কোনো মন্তব্য করতে চান না। কারণ, এটা এখন আইনি বিষয়। লিফটের নিচে পড়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা অ্যাকসিডেন্টও হতে পারে আবার নাও হতে পারে। আশা করি তদন্তে এবং ফরেনসিক প্রতিবেদনে সবকিছু বের হয়ে আসবে।’