অপরাধ ভাটামালিকের, সাজা খাটছেন শ্রমিক

অবৈধ ইটভাটা। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযানে। কিন্তু ভাটার মালিক তখন সেখানে নেই। পাওয়া যায় এক শ্রমিককে। তাঁকেই মালিক দেখিয়ে দেওয়া হয় সাজা। এর পর থেকে প্রায় দেড় মাস ধরে কারাগারে সেই শ্রমিক।

এ ঘটনা পটুয়াখালীর বাউফলের। ওই শ্রমিকের নাম মো. তারেক খান (২৮)। তিনি উপজেলার নওমালা গ্রামের আবদুল মতিন খানের ছেলে। তারেক উপজেলার ধানদী গ্রামের মেসার্স সিয়াম ব্রিকস নামের ইটভাটার শ্রমিক।

ইটভাটা কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, মেসার্স সিয়াম ব্রিকসের বৈধ কাগজপত্র নেই। এ অবস্থায় ইটভাটাটিতে গত ১৯ মাচর্ অভিযান পরিচালনা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। এতে নেতৃত্ব দেন বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক আবদুল হালিম। কিন্তু অভিযানকালে ভাটায় উপস্থিত ছিলেন না মালিক আবদুল আজিজ ওরফে কুট্টি মোল্লা। এ অবস্থায় আবদুল হালিম ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে উপস্থিত শ্রমিক তারেকের বিরুদ্ধে দণ্ড ঘোষণা করেন। তাঁকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ  না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের কাছে তারেক খুব কাকুতি মিনতি করেন। বলেন, তিনি ইটভাটার মালিক নন; শ্রমিক মাত্র। তিনি অত্যন্ত দরিদ্র মানুষ। তাঁর প্রতি জুলুম করা হচ্ছে। তবে কোনো কথাই শোনা হয়নি।

ভাটার মালিক আবদুল আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি যে এই ভাটার মালিক, তা সবাই জানে। কিন্তু কী কারণে আমার ভাটার শ্রমিককে মালিক বানিয়ে সাজা দেওয়া হয়েছে, তা আমি জানি না।’

জানতে চাইলে বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক আবদুল হালিম বলেন, ‘ভাটাটি অবৈধ। মালিক ছিলেন না। তাই যিনি ওখানে কাজ করবেন, তিনিই মালিক। যিনি কাজ করছিলেন, তিনিই অপরাধ করেছেন। তাই তাঁকে মোবাইল কোর্টের সাজা দেওয়া হয়েছে।’

দরিদ্র পরিবারের সন্তান শ্রমিক তারেক। ২০ লাখ টাকা পরিশোধের সামর্থ্য তাঁর ছিল না। তাই কারাগারে যেতে হয়। ইতিমধ্যে সাজা খাটা ১ মাস ১২ দিন অতিবাহিত হয়ে গেছে। তিনি পটুয়াখালী জেলা কারাগারে আছেন।

এদিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা যায়। কিন্তু সেই সুযোগ থেকেও বঞ্চিত  ভুক্তভোগী পরিবারটি। তাদের ভাষ্য, আপিল করতে সাজার নথিপত্রের সইমোহর নকল লাগে। এ জন্য বারবার ধরনা দিলেও নকল তুলতে পারেননি পরিবারের সদস্যরা।

তারেকের বাবা আবদুল মতিন বলেন, তাঁর নিরপরাধ ছেলেকে সাজা দেওয়া হয়েছে। এর বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য কাগজপত্র পেতে তিনি ২২ মার্চ আবেদন (স্মারক নম্বর ০৫.১০.৭৮০০.০১৪.০১.০২২.১৯-১৪৮) করেন। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তর তা দিতে গড়িমসি করছে। এমনকি তিনি সশরীরে কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। তবু কাগজপত্র দেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক আবদুল হালিম বলেন, ‘করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে লকডাউন চলছে। অফিস-আদালত সব বন্ধ। তাই আমরা সইমোহর নকল পৌঁছাতে পারিনি।’ কিন্তু তারেকের বাবা সশরীরে আপনার দপ্তরে গেলেও নকল দেওয়া হয়নি, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা সরকারি নথি। হাতে হাতে দেওয়া যায় না। উনি (তারেকের বাবা) জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর আবেদন করেছেন। নথি তাঁর কাছে যাবে।