করোনায় ময়মনসিংহের নারী উদ্যোক্তাদের মাথায় হাত

ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে উদ্যোক্তা হন তানজিলা রহমান। শহরের কে. বি ইসমাইল রোডে ‘নূর শপ’ নামে একটি ফ্যাশন হাউস চালু করেন। তাতে সব মিলিয়ে ৩৫ জন নারীর কর্মসংস্থান হয়। পরে অনলাইনেও একটি পেজ খুলে কাপড় বিক্রি শুরু করেন। ব্যবসা আরও বড় করার চিন্তা থেকে ব্যাংক ঋণ নেন। করোনাভাইরাসের হানায় এখন তাঁর মাথায় হাত।

তানজিলা রহমানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি রূপালী ব্যাংক থেকে ঋণ নেন গত জানুয়ারি মাসে। ফেব্রুয়ারি থেকে নিয়মিত কিস্তি দেওয়ার কথা থাকলেও এক কিস্তি দিয়েই আটকে গেছেন করোনার থাবায়। এখন কিস্তি দেওয়া তো দূরের কথা, কর্মচারী ও শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করা, দোকান ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল মেটানোই সম্ভব হচ্ছে না। বাংলা নববর্ষ ঘিরে যেসব কাপড় তৈরি করেছিলেন, তা অবিক্রীতই থেকে গেছে। এতে বড় ধরনের আর্থিক লোকসানের মুখে পড়েছেন তিনি। আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকেও বেশ কিছু টাকা ধার করেছিলেন, এখন সেই টাকা কীভাবে শোধ করবেন, তা নিয়েও চিন্তায় আছেন।

একই অবস্থা শহরের দুই জয়িতা ও জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত নারী উদ্যোক্তা সেলিমা ওয়াজেদ ও আইনুন্নাহার বেগমের। শহরের তালতলা এলাকায় 'গোধূলি সিবিপি' নামে প্রায় ৪০ লাখ টাকা খরচ করে একটি কারখানা তৈরি করেছেন সেলিমা ওয়াজেদ। তাঁর এই কারখানায় শুধু পাটজাত পণ্য উৎপাদন করা হয়। এতে ৪০ জন নারী কর্মী কাজ করেন। করোনাভাইরাসের প্রভাবে ৫ লাখ টাকার অর্ডার বাতিল হয়ে যাওয়ায় ব্যাপক লোকসান গুনতে হচ্ছে তাঁকে। পাশাপাশি কারখানা বন্ধ থাকায় কর্মচারীদের বেতন দিতে পারছেন না এবং মেশিনগুলোও অব্যবহৃত থাকায় অকেজো হয়ে যাচ্ছে।

আইনুন্নাহার বেগম ‘তৃণমূল কারুপণ্য’ নামে শহরের ডিবি রোডে একটি কারখানা স্থাপন করেছেন। তাঁর এখানে কর্মচারী আছেন ৫০ জন। একটি বিক্রয়কেন্দ্র আছে ধোপাখোলা এলাকায়। তিনিও বড় অঙ্কের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তিনি বলেন, এবারের বৈশাখ ও ঈদে প্রায় ৪০ লাখ টাকার পণ্য বিক্রির আশা করেছিলেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সবকিছু ভন্ডুল হয়ে গেল।

এ রকম আরও কয়েকজন নারী উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তাঁরা প্রত্যেকেই আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। অবস্থা এমন দাঁড়াচ্ছে যে ব্যবসা আর চালিয়ে নিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন। কারণ, তাঁরা প্রত্যেকেই আর্থিকভাবে দেনাগ্রস্ত বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে। এসব দেনা পরিশোধ করে ব্যবসায় টিকে থাকা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় আছেন তাঁরা।

এসব নারী উদ্যোক্তা এখন সরকারের সহায়তার অপেক্ষায় বিভিন্ন অফিসে দৌড়াদৌড়ি করছেন। তাঁরা সরকারকে প্রণোদনা প্রদান, প্রণোদনা পাওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন জটিলতার অবসান, ঋণের কিস্তির মেয়াদ বৃদ্ধি ও সুদের হার কমানোর জন্য দাবি জানিয়েছেন।

এসএমই ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা যায়, জেলায় নারী উদ্যোক্তা আছেন পাঁচ শতাধিক এবং তাঁদের অধীনে কাজ করেন ১২ হাজার শ্রমিক ও কর্মচারী। এসএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক ফারজানা খান বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের সহায়তা করার জন্য তাঁরা চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন এবং বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। প্রণোদনা প্রদান ও ব্যাংক ঋণের ব্যাপারেও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি এই সংকট থেকে উত্তোরণের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে এবং শ্রমিক-কর্মচারীদের জন্য ত্রাণ পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সহসভাপতি শঙ্কর সাহা বলেন, জেলায় নারী উদ্যোক্তাদের তালিকা প্রস্তুত হলে তাঁদের আর্থিক সহায়তা করার চেষ্টা করা হবে। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। নারী উদ্যোক্তাদের পাশে থেকে তাঁদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে।