শখের মোটরসাইকেল বিক্রির টাকায় ত্রাণ বিতরণ

শখের মোটরসাইকেলে মোজাম্মেল। ছবি: সংগৃহীত
শখের মোটরসাইকেলে মোজাম্মেল। ছবি: সংগৃহীত

কাউন্সিলরের ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে সহায়তা করতে গিয়েছিলেন মোজাম্মেল। ত্রাণ পেয়ে অসহায় কিছু মানুষের মুখে হাসি ফুটলেও অনেক মানুষই কিছু না পেয়ে ফেরত গেলেন। ত্রাণ না এই পাওয়া এই মানুষদের মুখেও হাসি ফোটাতে নিজে থেকে কিছু করার তাগিদ অনুভব করলেন মোজাম্মেল। কিন্তু হাতে নগদ টাকা নেই। তখন মাথায় আসে, তাঁর তো একটি মোটরসাইকেল আছে। টিউশনির টাকা জমিয়ে কেনা শখের মোটরসাইকেলটি বেচে দিয়ে সেই টাকা নিয়ে দাঁড়িয়েছেন অসহায় মানুষের পাশে।

মোজাম্মেল বেসরকারি ফেনী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ষষ্ঠ পর্বে লেখাপড়া করেন। পুরো নাম মোজাম্মেল হোসেন শুভ। তাঁর বাড়ি ফেনী শহরের বনানীপাড়ায়। মোটরসাইকেল বিক্রি করে বন্ধুদের নিয়ে ফেনী শহরের বনানীপাড়া ও বারাহীপুর এলাকার ৬০টি অসহায় পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছেন ‘ভালোবাসার উপহার’।

জানতে চাইলে মোজাম্মেল হোসেন জানান, গত ২২ এপ্রিল মোশারফ হোসেন নামে তাঁর বন্ধুর কাছে মোটরসাইকেলটি ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন। ওই টাকা থেকে প্রথম ধাপে ২৪ ও ২৫ এপ্রিল ৫০ হাজার টাকার খাদ্যসামগ্রী কিনে শহরের বনানীপাড়া ও বারাহীপুর এলাকায় ৬০টি অসহায় পরিবারের হাতে পৌঁছে দেন।

মোজাম্মেল বলেন, বাইক বিক্রির বাকি টাকা তিনি দুভাবে কাজে লাগাবেন। কিছু টাকা তাঁর বন্ধুদের নিয়ে গড়া ২০১১-১৩ ব্যাচের দাতব্য তহবিলে (চ্যারিটি ফান্ড) দেবেন। ওই তহবিলও সাধারণ মানুষের কল্যাণে ব্যয় করা হবে। এ ছাড়া বাকি টাকা দিয়ে আসন্ন ঈদে গরিব ও অসহায় পরিবারের লোকজনের মধ্যে খাদ্য ও ঈদবস্ত্র বিতরণ করবেন।

মোজাম্মেলদের পৈতৃক বাড়ি ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের নিজ পানুয়া গ্রামে। তবে ছোটবেলা থেকে বড় হয়েছেন ফেনী শহরের বনানীপাড়ায়। বাবা মহিউদ্দিন চৌধুরী একজন মুক্তিযোদ্ধা, মা গৃহিণী। তাঁরা দুই ভাই-বোন। বড় বোনের বিয়ে হয়েছে। বাবা দীর্ঘদিন মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসজীবন শেষে বর্তমানে শহরের বাসাতেই থাকেন। স্কুলজীবন থেকেই গরিব ও অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে মোজাম্মেলের ভালো লাগে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।

মোজাম্মেল জানান, তাঁর বেশ কয়েকজন বন্ধু সব সময় স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে অংশ নিয়ে থাকেন, তাঁকে সহযোগিতা করেন।

মোজাম্মেল বলেন, মোটরসাইকেলের প্রতি তাঁর প্রচণ্ড ঝোঁক। আগের পুরোনো মোটরসাইকেলটি বিক্রি করে এবং টিউশনি করে জমানো টাকা দিয়ে চার মাস আগে টিভিএস-আরটিআর একটি নতুন মোটরসাইকেল কিনেছিলেন। স্থানীয় পৌর কাউন্সিলরের সঙ্গ করোনা পরিস্থিতিতে ত্রাণ বিতরণে যাওয়া হতো। ২৫০-৩০০ প্যাকেট ত্রাণের খাদ্যের প্যাকেট নিয়ে এলাকায় গেলে সেখানে আরও বেশি মানুষ উপস্থিত হতেন। এটা তাঁর খুব খারাপ লাগত। অসহায় মানুষের মুখগুলো যখন চোখের সামনে ভেসে উঠত, তখন মন খারাপ হতো। তাঁদের জন্য কিছু একটা করার চিন্তা মাথা থেকেই বন্ধুদের সঙ্গে পরামর্শ করে মোটরসাইকেলটি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন।

মোজাম্মেল মনে করেন, জীবনে বেঁচে থাকলে আরও মোটরসাইকেল কিনতে পারবেন। কিন্তু এ ধরনের পরিস্থিতিতে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ আর না-ও আসতে পারে। তিনি সমাজের বিত্তবার লোকদেরও অসহায় কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।

মুঠোফোনে মোজাম্মেলের বাবা মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, তাঁর ছেলে এ ধরনের কাজ অনেক আগে থেকেই করেন। ঈদের সময় জামাকাপড় কেনার জন্য তাঁকে টাকা দিলে ওই টাকার একটা অংশ দিয়ে তিনি গরিব ছেলেমেয়েদের জন্য জামাকাপড় কিনতেন। ছেলের এ ধরনের কাজে তিনি খুশি।

ফেনী পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাহার উদ্দিন বলেন, মোজাম্মেল অত্যন্ত মানবিক ও খুব ভালো ছেলে। যেকোনো সেবামূলক কাজে সব সময় তাঁকে পাওয়া যায়। নিজের শখের মোটরসাইকেল বিক্রি করে কর্মহীন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এটা সবাই পারে না।