দেশে নমুনা পরীক্ষার ৬০ ভাগই হয়েছে গত ১০ দিনে

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত করার জন্য এযাবৎ যত নমুনার পরীক্ষা হয়েছে, তার প্রায় ৬০ শতাংশই হয়েছে গত ১০ দিনে। পরীক্ষাকেন্দ্র বাড়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরীক্ষা যেমন বেড়েছে, তেমনি কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হওয়াও বেড়েছে।

গতকাল পর্যন্ত মোট পরীক্ষা হয়েছে ৬৪ হাজার ৬৬৬ জনের। তাঁদের মধ্যে গত ১০ দিনেই পরীক্ষা হয় ৩৮ হাজার ৬২ জনের। দেশে এখন মোট ২৯টি কেন্দ্রে পরীক্ষা হচ্ছে। ১৭ এপ্রিল পযন্ত পরীক্ষাকেন্দ্র ছিল ১৭টি।

বুধবার সকাল আটটা থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৪ হাজার ৯৬৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে, যা এখন পর্যন্ত দেশে এক দিনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যা। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় নমুনা আরও তিনটি বেশি ছিল। ১০ দিন আগেও দৈনিক পরীক্ষার সংখ্যা তিন হাজারের নিচে ছিল।
রোগতত্ত্ববিদেরা আগেই বলেছিলেন, শনাক্তকরণের পরীক্ষা বাড়লে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা বাড়বে। গত ২৪ ঘণ্টায় কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে ৫৬৪ জন। তার আগের দিন হয়েছিল ৬৪১ জন। কেন্দ্র্রগুলোর পূর্ণ সদ্ব্যবহার হলে নমুনা পরীক্ষা আরও বাড়বে। সব কেন্দ্র মিলিয়ে এখন রোজ কমবেশি ৮ হাজার পরীক্ষা করা সম্ভব। গত তিন দিনে রোজ পরীক্ষা হয়েছে সাড়ে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজারের কাছাকাছি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান খান বলেন, পরীক্ষার সক্ষমতা থাকলেই হয় না, নমুনা সংগ্রহের বিষয় রয়েছে। তিনি বলেন, রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকলে কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো হবে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) গত ২ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষা শুরু করে। ৮ মার্চ দেশে প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। ৩০ মার্চ থেকে পরীক্ষাকেন্দ্র বাড়তে থাকে। ১৭ এপ্রিল নাগাদ ঢাকায় নয়টি এবং ঢাকার বাইরে আটটি পরীক্ষাকেন্দ্র ছিল। তারপর ঢাকা ও সাভারে তিনটি এবং আরও আট জেলায় নয়টি পরীক্ষাকেন্দ্র হয়। এখন প্রতিটি বিভাগেই পরীক্ষাকেন্দ্র আছে।

>করোনার সংক্রমণ পরীক্ষাকেন্দ্র ও রোগী শনাক্ত হওয়া অনেক বেড়েছে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকারি-বেসরকারি আরও কেন্দ্র আসছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা শুরু থেকেই শনাক্তকরণ পরীক্ষার ওপর জোর দিয়ে আসছে। গত ১৪ এপ্রিল প্রকাশিত করোনাভাইরাস প্রতিরোধবিষয়ক কৌশলপত্রে সংস্থাটি দ্রুত রোগী শনাক্ত করা এবং তার সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছে।
আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুশতাক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ১৬ এপ্রিল সরকার যখন সারা দেশকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে, তখনো দিনে মাত্র ১ হাজারের মতো নমুনা পরীক্ষা হচ্ছিল। এখন দেশ করোনা সংক্রমণের চতুর্থ স্তরে আছে। পরীক্ষা বাড়লে শনাক্তকরণ বাড়বে। মহামারি নিয়ন্ত্রণের জন্য সেটা জরুরি। পরীক্ষাকেন্দ্রগুলোর সক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার জরুরি।
এখনো কিন্তু জনসংখ্যার অনুপাতে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের চেয়ে এখানে যথেষ্ট কম পরীক্ষা হচ্ছে। পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারস দেশভিত্তিক করোনাবিষয়ক হালনাগাদ তথ্য দিয়ে আসছে। ওয়ার্ল্ডোমিটারসের হিসাবে গতকাল সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রতি ১০ লাখে ৩৯৩ জনের করোনার পরীক্ষা করা হচ্ছিল। দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে এগিয়ে ছিল মালদ্বীপ, যেখানে ১০ লাখে প্রায় ১০ হাজার জনের পরীক্ষা হচ্ছিল।
বিশেষজ্ঞ ও ল্যাবরেটরি-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাংলাদেশে পরীক্ষা বেশি না হওয়ার একটি বড় কারণ, মাঠপর্যায় থেকে নমুনা সংগ্রহে জটিলতা। এখানে নমুনা সংগ্রহকারীরা যথেষ্ট প্রশিক্ষিত নন। আবার সঠিক পদ্ধিতে সংরক্ষণ করে ল্যাব পর্যন্ত আনতে না পারায় নমুনা নষ্ট হওয়ার নজিরও আছে।
শনাক্তকরণ পরীক্ষা করা হচ্ছে পিসিআর পদ্ধতিতে। এটা করার মতো দক্ষ প্রযুক্তিবিদ বা টেকনিশিয়ানের সংকট রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কয়েক শ ল্যাব টেকনিশিয়ান ও পরিচালক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।
অধিদপ্তর বলেছে, কয়েক দিনের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজসহ আরও কয়েকটি কেন্দ্রে নমুনা পরীক্ষা শুরু হবে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল পরিদর্শন করে তাদেরও অনুমতি দেওয়া হবে।
অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা বলেছেন, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে বেসরকারি ইউএস–বাংলা মেডিকেল কলেজ পরীক্ষা শুরু করেছে। সেখানে যে কারও নমুনা পরীক্ষা করানো যাবে।
এ ছাড়া ঢাকার এভারকেয়ার (সাবেক অ্যাপোলো), স্কয়ার ও ইউনাইটেড হাসপাতাল পরীক্ষা করার অনুমতি পেয়েছে। তবে তারা শুধু নিজেদের ভর্তি রোগীদের নমুনা পরীক্ষা করতে পারবে।