প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ১০ হাজার টাকা দিলেন নেত্রকোনার সেই রিকশাচালক

তারা মিয়া। ফাইল ছবি
তারা মিয়া। ফাইল ছবি

নেত্রকোনার দুর্গাপুরের রিকশাচালক তারা মিয়াকে (৩৮) এখন এলাকার অনেকেই চিনেন। তিনি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রিকশা চালান। রোদে পোড়েন। বৃষ্টিতে ভেজেন। কাঁপেন শীতে। যা আয় হয়, তাতে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। তবু আয়ের বড় অংশ ব্যয় করেন দুস্থ শিক্ষার্থীদের পেছনে।

কারণ, তারা মিয়া নিজে লেখাপড়া করতে পারেননি অর্থের অভাবে; তিনি চান না, একই কারনে তাঁর মতো অন্য কারও পড়ালেখা বন্ধ হোক। এবার করোনা পরিস্থিতিতে তিনি নিজের জমানো ১০ হাজার ২০০ টাকা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে জমা দিয়ে আলোচনায় এসেছেন এই রিকশাচালক।

শুক্রবার দুপুরে দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদে এসে স্থানীয় সাংসদ মানু মজুমদার ও দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা খানমের হাতে এই টাকা তুলে দেন তারা মিয়া। এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন আল আজাদ, পৌরসভার মেয়র আব্দুস সালাম, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
তারা মিয়া বলেন, তিনি সারা দিন রিকশা চালিয়ে রাতে বাড়িতে গিয়ে একটি মাটির ব্যাংকে ২০-৩০ টাকা করে সঞ্চয় করেন। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারনে এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। তাই শিক্ষা শিক্ষার্থীদের খাতা-কলমের তেমন দরকার নেই। এই চিন্তা থেকে তিনি দরিদ্র শিক্ষার্থীদের এসব উপকরণ না কিনে দিয়ে জমানো টাকা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
তারা মিয়া বলেন, 'আমি নিজেও গরিব মানুষ। তবু আমি নিজে আয় করে পরিবার নিয়ে খেতে পারছি। আমার চেয়ে যারা আরও গরিব, ঘরে খাবার নেই, তাঁদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে আমি এই টাকা দিয়েছি। তা দিয়ে কিছুটা হলেও অভাবী মানুষের জন্য উপকার হবে। টাকা জামা দিতে পেরে আমি খুশি।'
তারা মিয়ার বাড়ি উপজেলার চকলেঙ্গুরা গ্রামে। দিনমজুর বাবা আবদুল হেলিমের তিন সন্তানের মধ্যে তিনি সবার বড়। হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম হওয়ায় তিনি লেখাপড়া করতে পারেননি। প্রায় ১০ বছর ধরে তিনি রিকশা চালান। লেখাপড়া শিখতে না পারার কষ্ট ভুলতে চান তিনি এলাকার দরিদ্র শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়ে। গত পাঁচ বছরে উপজেলার অন্তত ২২টি বিদ্যালয়ের ৬ শতাধিক গরিব ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে সাহায্য করেছেন।
স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে তারা মিয়ার ছোট সংসার। ছেলে রিফাত মিয়া (১১) চকলেঙ্গুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। স্ত্রী নাজমা আক্তার (৩২) পেশায় কয়লাশ্রমিক। তিনি সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত গ্রামের অদূরে সোমেশ্বরী নদী থেকে কয়লা সংগ্রহ করে তা বিক্রি করেন। তারা মিয়াকে নিয়ে গত ২০১৮ সালের ২৪ মার্চ প্রথম আলোতে 'আলোর পথের পথিক তারা' শিরোনামে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
সাংসদ মানু মজুমদার ও ইউএনও ফারজানা খানম বলেন, তারা মিয়া অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যাচ্ছেন। তাঁর কাছ থেকে সবার শেখার আছে। হতদরিদ্র এই মানুষটির মহানুভবতা দেখে সমাজের বিত্তবানদের শিক্ষা নেওয়া উচিত।