শরীরে করোনা নিয়ে তিনি কাজ করছিলেন কোভিড হাসপাতালে

করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স
করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স

নোয়াখালীতে করোনার চিকিৎসায় শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে গত বৃহস্পতিবার থেকে চালু হয়েছে কোভিড-১৯ হাসপাতাল। ওই দিন থেকে হাসপাতালে রোগীর সেবা দিচ্ছিলেন এক ওয়ার্ড বয়। গতকাল শনিবার রাতে চট্টগ্রামের বিআইটিআইডি থেকে পাঠানো নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে ওই ওয়ার্ড বয়ের (২৪) শরীরে করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়।

করোনা শনাক্ত হওয়া এই ওয়ার্ড বয়ের কর্মস্থল ছিল জেলার হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। নোয়াখালীতে করোনা হাসপাতাল চালু হওয়ায় তাঁকে সেখানে পাঠানো হয়েছিল। একই দিন হাতিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত আরেকজন আয়া (২৩) এবং সদর উপজেলার এক যুবকের (২৫) করোনা শনাক্ত হয়েছে। গত ২৬ এপ্রিল তাঁদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল। এ নিয়ে জেলায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১৪ ।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নোয়াখালীর কোভিড-১৯ হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক, নার্স, উপসহকারী চিকিৎসা কর্মকর্তা ও ওয়ার্ড বয়সহ ২৪ জনকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। হাসপাতালের দায়িত্বে আসবেন চিকিৎসকসহ নতুন একদল স্বাস্থ্যকর্মী।

হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, আক্রান্ত ওয়ার্ড বয়ের গ্রামের বাড়ি কবিরহাট উপজেলার ধানসিড়ি ইউনিয়নে। আয়ার বাড়ি হাতিয়া পৌর এলাকায়। তাঁরা দুজনই চাকরিতে যোগ দিয়েছেন গত ২৯ মার্চ। যোগ দিয়েই ওয়ার্ড বয় ছুটিতে চলে যান। পরে ৫ এপ্রিল কর্মস্থলে যোগ দেন। ২৯ এপ্রিল তাঁকে কোভিড-১৯ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ৩০ এপ্রিল থেকে তিনি সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে তাঁর এবং আয়ার শরীরে এখন পর্যন্ত করোনার কোনো উপসর্গ নেই।

হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন গতকাল শনিবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রায় সব কর্মীর নমুনা সংগ্রহ করে করোনা পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছিলেন। এর মধ্যে ওই ওয়ার্ড বয় ও আয়ার নমুনাও পাঠানো হয়। তবে তাঁদের কারও শরীরেই করোনার কোনো উপসর্গ ছিল না। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনের নমুনা পরীক্ষায় ফলাফল নেগেটিভ আসে। বাকিদের পরীক্ষার প্রতিবেদন আসতে সময় লাগে। ইতিমধ্যে সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে এক ওয়ার্ড বয়সহ তিনজনকে জেলা সদরে কোভিড-১৯ হাসপাতালে দায়িত্ব পালনের জন্য ডাকা হয়। সে অনুযায়ী তাঁদের সেখানে পাঠানো হয়েছে। যাঁদের মধ্যে একজনের (ওয়ার্ড বয়) শরীরে করোনার সংক্রমণ পাওয়া গেছে।

করোনা সংক্রমণের নমুনা সংগ্রহের পর ফলাফল জানার আগেই সন্দেহভাজন স্বাস্থ্যকর্মীকে কোভিড-১৯ হাসপাতালে সেবার দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে জেলার সিভিল সার্জন মোমিনুর রহমান দাবি করেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তাঁকে এ বিষয়ে কিছু জানাননি। তা ছাড়া ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ঠিক কতজন কর্মীর নমুনা পাঠানো হয়েছিল, সেটিও তাঁকে সুনির্দিষ্টভাবে জানানো হয়নি। সিভিল সার্জন বলেন, কোভিড-১৯ হাসপাতালে নতুন লোকবল নিয়োগ দেওয়া হবে। এ ছাড়া হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সম্পূর্ণভাবে লকডাউন করা হবে।

কোভিড ১৯ হাসপাতালের সমন্বয়ক নিরুপন দাস প্রথম আলোকে বলেন, আগামীকাল সোমবারের মধ্যে এই হাসপাতালে কর্মরত ২৪ জনের সবাইকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হবে। সবার করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে।

সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সদর উপজেলার নোয়ান্নই ইউনিয়নে যে ব্যক্তির (২৫) করোনার সংক্রমণ পাওয়া গেছে, তিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে এসেছিলেন। ওই তথ্যের ভিত্তিতে তাঁরা ২৬ এপ্রিল নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছিলেন এবং ওই ব্যক্তিকে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলেছেন। এখন তাঁর বাড়ি লকডাউন করা হবে এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করা হবে।